ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বাড়ির ছাদে বেদানা চাষে সফলতা
নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর:

বেদানা বা আনার খেতে কার না ভালো লাগে। ছোট থেকে বড় বেদনার প্রতি আকর্ষণ সবার। দানাদার এই ফলের বীজ মুখে দিলেই এর সুমিষ্ট রসে মন ভরে ওঠে। পুষ্টিগুণে ভরপুর স্বাস্থ্যসম্মত বলবর্ধক এই ফল, রোগীদের পথ্য হিসাবে আদর্শ। 

হর্টিকালচার বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে ৩৮ হাজার ৩২৮ টন বেদানা আমদানি হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার দর অন্তত ৮ হাজার কোটি টাকা। বাজারে এর বিপুল চাহিদা থাকলে আবহাওয়াজনিত কারণে এই ফলের আমাদের দেশে চাষ করা সম্ভব হয় না। 

 এবার নাটোর পৌর শহরের দক্ষিণ বড়গাছায় বাসার ছাদ বাগানে আমদানিনির্ভর ফল বেদানা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন আব্দুল্লাহিল বাকি তরিত নামে এক তরুণ আইনজীবী। মাত্র ৪শ' স্কয়ার ফিট আয়তনের ছাদে বছরে প্রায় ৩০০ কেজি উন্নত জাতের বেদানা উৎপাদন করে তিনি সাড়া ফেলেছেন। শুরুটা শখের বসে হলেও সহজে, বুদ্ধি খাটিয়ে ছাদবাগানে এই ফলের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অধিকাংশ গাছেই ঝুলতে দেখা গেছে টকটকে লাল বেদানা। ভালো ফল পাওয়ায় আশপাশের ছাদেও বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করতে চান তিনি।

আব্দুল্লাহিল বাকি তরিত বলেন, আমি মহামারি করোনার মধ্যে শুরু করি ছাদ বাগান।  শখের বসে বাড়ির ছাদে সবজির পাশাপাশি ফলের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে ৫২টি গাছে বছরে ৫ থেকে ৬ কেজি বেদানা ধরছে। যা স্বাদে ও মানে আমদানি করা বেদানার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। প্রথম বছর থেকেই ফল দিয়েছে এবং প্রতিটি বেদানা ৩০০/৩৫০ গ্রাম ওজনের হয়। ওইগুলো যেমন রসালো তেমন সুমিষ্ট।

গাছগুলোর পরিচর্যায় মাটি, গোবর, খইল, সবজি, পচা পানি দিয়ে জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করা হয়। তবে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে গাছের গোড়ায় কোনো প্রকার পানি জমতে দেয়া যাবে না। নিস্কাশন ব্যবস্থা অবশ্যই ভালো থাকতে হবে বলে জানান তিনি। তার স্ত্রী তাসনিন সুলতানা বলেন, পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমরা আত্মীয়-স্বজনদের দিতে পারছি। এতে করে তারাও খুশি হচ্ছেন। 

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষাকাল নেই এমন দেশে বেদানার আবাদ বেশি হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকাল থাকায় মাটিতে রোপণ করে তেমন ভালো ফল পাওয়া যায় না। তবে বাড়ির ছাদে জিও ব্যাগ বা বড় টবে চাষ করা হলে বেদানার রয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনা।

নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক ড. জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, নাটোরে বাসাবাড়ির ছাদগুলো কৃষিকাজের আওতায় আনার জন্য আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। আর বাড়ির ছাদে এসব ফল চাষ করে বাড়তি আয় করাও সম্ভব।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (হর্টিকালচার উইং) পরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল বলেন, এই ফল বাংলাদেশে সরাসরি মাটিতে চাষ করা যায় না। তবে বাড়ির ছাদে বড় টবে কিংবা ব্যাগে চাষ করা যায়। দেশে বেদানার চাহিদার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও থাইল্যান্ডসহ অন্তত ৭টি দেশ থেকে আসা বেদানার দামও থাকে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

নাটোরে উঁচু ভবনগুলোতে সবজির পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বেদানা চাষ করলে স্থানীয় পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর