ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সেচ সংকটে ৬০ গ্রামের কৃষক
দখল-দূষণে ধুঁকছে অদের খাল
মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা
ফাইল ছবি

অদের খাল। কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঁচ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দখল ও দূষণে ধুঁকছে খালটি। আর এই খালে পানি না থাকায় সেচ সংকটে পড়ছেন ৬০-৭০ গ্রামের কৃষক। উপজেলাগুলো হলো- কুমিল্লার মুরাদনগর ও হোমনা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, কসবা ও বাঞ্ছারামপুর। 

স্থানীয়রা জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর, কসবা ও কুমিল্লার মুরাদনগর এই তিন উপজেলার সংযোগ স্থল নবীনগরের লাউরফতেহপুর। এখান থেকে পশ্চিম দিকে বয়ে যাওয়া স্রোতধারার নাম অদের খাল। ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ খাল নবীনগর ও মুরাদনগর উপজেলাকে বিভক্ত করে বাঞ্ছারামপুরের ফরদাবাদ হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে।  সরেজমিন মুরাদনগর উপজেলার গাজীর হাট বাজার ও পাশের নবীনগর উপজেলার মালাই বাঙ্গরা বাজারে দেখা যায়, দুই বাজারের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে অদের খাল। দুই বাজারকে সংযুক্ত করেছে খালের ওপরে একটি ব্রিজ। ব্রিজের নিচে বাজারের আবর্জনা ফেলে এ খালের গতিপথ প্রায় বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া দুই পাশে খাল দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন। এমন দখল ও দূষণের চিত্র রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া দীর্ঘদিন খালটি খনন করা হয় না। রাজাবাড়িসহ কয়েকটি স্থানে ব্যক্তি উদ্যোগে নিচু বেইলি সেতু নির্মাণের কারণে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। 

কসবা এলাকার লেখক শাহনুর আলম তার এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, এ খালে জোয়ার-ভাটা হতো। বর্ষাকালে হাজারো পাল তোলা, দাঁড়টানা আর লগি-বৈঠা বাওয়া নৌকার প্রধান রাস্তা ছিল এটি। দুই তীরের কৃষি জমিতে সেচ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এক সময় এই খালের পানিতে পাওয়া যেত নানান প্রজাতির মাছ। মাঝি মাল্লাদের হাঁকডাক আর সুরের ও বেসুরের গানও শোনা যেত। প্রভাবশালীরা খাল দখল করে দোকান, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় খালটি শীর্ণ হয়ে গেছে, এর সৌন্দর্য দিন দিন বিনষ্ট হচ্ছে।  লাউরফতেহপুর এলাকার কৃষক জামাল হোসেন বলেন, ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এখানে পানি থাকে। তারপর এই খালে পানি থাকে না। পানির জন্য আমাদের পুকুর ও বিভিন্ন জলাশয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। সামাজিক সংগঠন ঐতিহ্য কুমিল্লার সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, এই খালের রাজাবাড়ি অংশসহ কয়েকটি স্থানে ব্যক্তি উদ্যোগে নিচু বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে দুই বছর ধরে নৌযান চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। 

কসবা উপজেলার বাদৈর গ্রামের বাসিন্দা উপ-সচিব ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, আমার গ্রাম ও পাশে বল্লভপুরের পাশ দিয়ে অদের খাল প্রবাহিত হয়েছে। এক সময় এ খাল ঘিরেই ছিল এ এলাকার মানুষের রঙিন শৈশব। খালে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা ও হইহুল্লোড় এখনো চোখে ভাসে। এই খাল দিয়ে নৌকায় কুটি চৌমুহনী বাজারে যেতাম। এখন সেই জলপথ নেই। নেই পানি, নেই দেশি মাছ। এখন সব বিবর্ণ। 

বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ) কুমিল্লা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ শেষের পথে। এই প্রকল্প এলাকায় আরও এক হাজার কিলোমিটার খাল খননের আবেদন রয়েছে। নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে অদের খাল খননের চেষ্টা করা হবে।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর