ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

হাঁসের হ্যাচারিতে সুদিন ফিরেছে যুবাইরের
সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন, কিশোরগঞ্জ

ঋণ করে ৩ লাখ টাকা দিয়ে হাঁসের হ্যাচারি শুরু করেছিলেন প্রায় পাঁচ বছর আগে। ঋণ পরিশোধ হয়েছে কয়েক মাসের আয় থেকেই। এখন প্রতি মাসে আয় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। সফল এই উদ্যোক্তার নাম যুবাইর আহমেদ। ত্রিশের কোটায় বয়স তার। কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার রায়টুটি ইউনিয়নের কৃষক তোরাব আলীর ছেলে যুবাইর। সাত বোনের একমাত্র ভাই তিনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ মাস্টার্স সম্পন্ন করা যুবক যুবাইর পড়ালেখা শেষ করে ভালো চাকরির চেষ্টা করছিলেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং প্রাইভেট কোম্পানিতে কিছুদিন চাকরিও করেন। কিন্তু সেখানে তার মন টেকেনি। উদ্যোক্তা হয়ে অনেকের চাকরির ব্যবস্থা করবেন, এমন চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে তার। চিন্তার সঙ্গে ঐকান্তিক ইচ্ছা ও চেষ্টার সম্মিলনে অবশেষে সফলতা ধরা দেয়।

পার্শ্ববর্তী তাড়াইল উপজেলার দামিহা ও জাওয়ার এলাকায় হাঁসের হ্যাচারি দেখে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। হ্যাচারি মালিকদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে হ্যাচারি সম্পর্কে আদ্যোপান্ত আয়ত্ত করেন। একপর্যায়ে নিজে হ্যাচারি দেওয়ার চিন্তা করলেও বাদ সাধে মূলধন। সেটাও উতরাতে সক্ষম হন তিনি। স্বজনদের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ২০১৯ সালে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন হাঁসের হ্যাচারি। তুষ পদ্ধতিতে ডিম ফুটিয়ে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন শুরু করেন। প্রথমদিকে ২৫ হাজার ডিম দিয়ে বাচ্চা ফোটানো শুরু করেন। তুষ পদ্ধতিতে ২৮ দিনের মাথায় ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। কয়েক মাসের আয় থেকে ঋণ পরিশোধ করেন তিনি। কিন্তু করোনা মহামারির সময় পড়ে যান লোকসানে। তবু ভেঙে পড়েননি। ক্ষতি কাটিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করেন।

বর্তমানে প্রতি মাসে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ডিম দিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করছেন। তার হ্যাচারির উৎপাদিত প্রতিটি এক দিনের বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৩ টাকা দরে। এতে খরচ বাদে প্রতি মাসে লাভ থাকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। তার হ্যাচারিতে কর্মসংস্থান হয়েছে চারজন যুবকের। নিজেও শ্রম দেন। সফল উদ্যোক্তা যুবাইর আহমেদ জানান, তার হ্যাচারির উৎপাদিত হাঁসের বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে বরিশাল, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। পাইকাররা এসে বাচ্চা কিনে নিয়ে যান হ্যাচারি থেকে। কোনো সময় নিজেও পৌঁছে দেন। হ্যাচারির আকার আরও বড় করার জন্য ব্যাংক ঋণের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু উপজেলা সদরের ব্যাংকের শাখা থেকে তার বাড়ি অনেক দূরে এবং যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় ব্যাংক কর্মকর্তা ঋণ দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়া সহজ। এ জন্য দরকার মনোবল, একাগ্রতা আর পরিশ্রম। গত বছরের জুন মাসে বিয়ে করেন যুবাইর আহমেদ। তার কাজে স্ত্রীও সহযোগিতা করছেন। এখন এলাকার অনেক যুবকের অনুপ্রেরণা তিনি।



এই পাতার আরো খবর