ঢাকা, রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে সবুজ পাহাড়
ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

শখের বাগান এখন অর্থনৈতিক কারখানা। বছরের সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি হচ্ছে ফসল। বলছি রাঙামাটির সূর্যমুখী সম্ভাবনার কথা। সূর্যমুখী নামমাত্র ফুল। কিন্তু সে ফুল থেকে আয় হচ্ছে লাখো টাকা। এ একটি ফুল থেকে যেমন তৈরি হচ্ছে তেল, তেমনি তৈরি হচ্ছে মাছের খাবার অর্থাৎ খৈল। আবার বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হচ্ছে ফুলও। এতে চাষীরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তেমনি তেলের চাহিদাও মিটছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। 

আবার সূর্যমুখীর আবাদ দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থী ও পর্যটকরাও। তাই এক কথায় বলা যায় সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে সবুজ পাহাড়। অন্যদিকে, একই জেলায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরিষা ও চিনা বাদামের চাষাবাদ। 

রাঙামাটি কৃষি বিভাগ বলছেন, রাঙামাটির ১০টি উপজেলায় সূর্যমুখী চাষাবাদ হচ্ছে। জেলার প্রায় ১২০০ বিঘা জমিতে আবাদ হয়েছে এ সূর্যমুখী। এ বছর সূর্যমুখী উৎপাদন হবে ৪৯ মেট্টিকটন। আর চিনা বাদাম ও সরিষাসহ তেল উৎপাদন হবে ১২. ১১ মেট্টিক টন। সাধারণত উফশি হাইসান-৩৩, বারি-২ ও ৩। হাইসান-৩৬ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। সূর্যমুখীর তৈল ছাড়াও খৈল দিয়ে মাছের খাবার এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাচ্ছে। 

এবার সবচেয়ে বেশি নানিয়ারচর উপজেলা ও বরকলের হরিণা ও ভূষণছড়া, এরাবোনিয়ায়। কৃষি বিভাগ ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহায়তায় এবার উল্লেখযোগ্য বাগান করা হয়েছে সূর্যমুখীর। এছাড়া উপযুক্ত চাষাবাদের কারণে প্রথম চাষে বাম্পার ফলন পেয়েছে কৃষকরা। ফুলে ফুলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। তাই দেখে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। কম খরজে বেশি লাভের সূর্যমূখী চাষের দিকে ঝুঁকছে অনেক চাষী। তাই পাহাড় এখন সূর্যমুখীর দখলে। 

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক আ প্রু মারমা জানায়, সূর্যমুখী একধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এ বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয়। সূর্যমুখীর চাষ সারা বছর করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য-নভেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর) চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সে. এর নিচে হলে ১০-১২ দিন পরে বীজ বপন করতে হয়। খরিপ-১ মৌসুমে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ (মধ্য-এপ্রিল থেকে মধ্য-মে) মাসেও এর চাষ করা যায়। এক হাজার বীজের ওজন ৬০-৬৫ গ্রাম। বীজের রঙ কালো এবং লম্বা ও চেপ্টা। প্রতি গাছে একটি করে মাঝারি আকারের ফুল ধরে থাকে। বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে ৯০-১০০ দিন সময় লাগে। 

তিনি আরও বলেন, চাষীদের একটা দাবি পূরণের পরিকল্পনা রয়েছে। তেল জাতীয় ফসলের জন্য তেল তৈরি মেশিনের ব্যবস্থা করা। 

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সম্প্রতি রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ৫ হেক্টর, বরকল উপজেলায় ২৫ হেক্টর, জুরাছড়ি উপজেলায় ৫ হেক্টর, লংগদু উপজেলার ২০ হেক্টর এবং বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের আওতায় আনা হয়েছে। বছরের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এ চাষাবাদ। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকেই এ সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করছেন। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত



এই পাতার আরো খবর