ঢাকা, বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব
নদীর বুকজুড়ে চাষাবাদ
কমেছে মাছের বিচরণক্ষেত্র
আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁওয়ের শুকিয়ে যাওয়া টাঙ্গন নদীতে বোরো আবাদ -বাংলাদেশ প্রতিদিন।

দিনের পর দিন ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন নদীতে কমছে পানিপ্রবাহ। এরই মধ্যে শুকিয়ে গেছে অনেক নদী। পানি না থাকায় এসব নদীর বুকে জেগেছে চর। অনেকে নদীর বুকজুড়ে বোরো ধান চাষাবাদ করেছেন। 

জানা যায়, ঠকুরগাঁও জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে টাঙ্গন, সেনুয়া, ভুল্লী, ঢেপা, শুকসহ ১১টি নদনদী। যার প্রত্যেকটিরই অবস্থাই খারাপ। বেশির ভাগ নদীর বুকে হচ্ছে চাষাবাদ। এক সময় আশপাশের মানুষ এসব নদনদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পানি না থাকায় মাছও কমে গেছে। বদলে গেছে নদীতীরের মানুষের পেশাও। 

স্থানীয় বোরো চাষিরা জানান, গভীর নলকূপ দিয়ে সেচের চেয়ে নদী থেকে চুয়ে আসা পানি বোরো চাষের জন্য বেশি উপকারী। এতে সার, সেচসহ সবকিছুতে সাশ্রয় হয়। এ ছাড়া নিজের আবাদি জমি না থাকায় চাষাবাদের জন্য অনেকে নদীর চরকে বেছে নিয়েছেন।

টাঙ্গন নদীতে বোরো খেতে সেচ দিচ্ছিলেন আবদুল আলী নামের একজন। তিনি জানান, নদের বালুচরে আবাদ করায় খরচ কম লাগে। এখানে বোরো আবাদে বাড়তি সেচ দরকার হয় না। খুব বেশি সারও ব্যবহার করতে হয় না। অল্প খরচে সব কিছু করা সম্ভব। তাই নদীর বুকেই চাষাবাদ করা হচ্ছে। 

ওমর ফারুক নামের আরেক চাষি বলেন, নদীর বুকে বোরো আবাদে বাড়তি পানি লাগে না। সারও ব্যবহার করতে হয় কম। যে পরিমাণ ধান পাওয়া যায়, তাতে পরিবারের সবার চালের চাহিদা মিটে যায়।

শামসুল হক নামের এক জেলে বলেন, এসব নদীতে এক সময়ে প্রচুর পরিমাণে বোয়াল, গলদা, পাবদা, পুঁটি, শোল, মাগুর, কইসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন আর পাওয়া যায় না। দিন দিন নদীগুলো ভরাট হয়ে সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নদীই হারিয়ে যেতে বসেছে। 

সিরাজুল নামের আরেক জেলে বলেন, আগে নদীতে অনেক মাছ পাওয়া যেত। মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন পানির অভাবে মাছ মিলছে না। ফলে পেশা পাল্টাতে হবে। সকাল থেকে জাল ফিলে এক কেজি মাছও ধরা পড়ে না। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালিদুজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের নদনদী শুকিয়ে গেছে। এতে জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। মাছ ও পাখির বিচরণক্ষেত্র কমে গেছে। মাছ বংশ বিস্তারের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না। 

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবে) নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, জেলার দু-তিনটি নদনদী ছাড়া সব কটিই প্রায় পানিশূন্য। এসব নদনদীর বুকে অনেকেই ধান চাষ করছেন। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তাদের নদনদীর বুকে ধান চাষাবাদ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা যে দন্ডনীয় অপরাধ, সে বিষয়েও সচেতন করা হচ্ছে। এরপরও তাদের আটকানো যাচ্ছে না। 

ঠাকুরগাঁওয়ের সচেতন মানুষের দাবি অচিরেই খনন করে নদী আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এই বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন জেলাবাসী।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর