ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পার্থেনিয়াম গাছ ছড়াচ্ছে ক্যান্সার
আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়া জেলাজুড়ে বিষাক্ত উদ্ভিদ পার্থেনিয়াম মানবদেহে ছড়াচ্ছে মরণব্যাধি ক্যান্সার। এতে আক্রান্ত হচ্ছে ফসল ও গবাদিপশু। এ উদ্ভিদ সড়কের দুই পাশে, ফসলের মাঠের পাশসহ প্রায় এলাকাতেই ছড়িয়ে পড়েছে। যত্ন ছাড়াই নির্বিঘ্নে বেড়ে উঠছে মৃত্যুদূত এ পার্থেনিয়াম। হঠাৎ দেখলে যে কারও মনে হবে বড় আকারের ধনিয়াগাছ। চিকন সবুজ পাতার ফাঁকে ছোট ছোট সাদা ফুলে আকর্ষণীয় দেখায় গাছগুলোকে। তবে এ সবুজের মাঝেই যে বিষ লুকিয়ে আছে তা মানুষের জানা নেই।

জানা যায়, বগুড়া জেলার গাবতলী, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, দুপচাঁচিয়া, কাহালু, বগুড়া পৌর শহরের মালতিনগর এলাকা ও গ্রামীণ সড়কসহ প্রায় সব জায়গাতে সড়কের পাশে, ফসলের খেত এমনকি বাড়ির আঙ্গিনাতেও জন্মাচ্ছে বিষাক্ত এ গাছ। পার্থেনিয়ামের একটি গাছ ৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার অতিক্ষুদ্র বীজের জন্ম দিতে পারে। একটি গাছ বাঁচে তিন থেকে চার মাস। এ সময়ের মধ্যেই তিনবার ফুল ও বীজ দেয়। এই বীজ এত ক্ষুদ্র যে সাধারণত গবাদিপশুর গোবর, গাড়ির চাকার কাদামাটি, পথচারীদের জুতা-স্যান্ডেলের তলার কাদামাটি, সেচের পানি ও বাতাসের সঙ্গে এর বিস্তার ঘটে। ফুল হয় সাধারণত গোলাকার, সাদা এবং পিচ্ছিল। কোনোরকম যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে পার্থেনিয়াম। প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার বিশেষ সক্ষমতাও রয়েছে এর। তবে স্থানীয় কৃষক বা সাধারণ মানুষ কারোরই ধারণা নেই এ গাছের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। দৃষ্টিকাড়া হলেও নীরবে বিষ ছড়াচ্ছে ছোট এই আগাছা। বিষাক্ত এ গাছ থেকে হতে পারে নানা রোগ। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদেরও এটি সম্পর্কে ধারণা নেই। কৃষিজমিতে পার্থেনিয়াম যে কোনো ধরনের ফসলের উৎপাদন প্রায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে দিতে সক্ষম। এটি সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করে আমের বাগান, আখ, কলা, হলুদ, করলা, শিমের খেতে। এমনকি এ বিষাক্ত গাছ গবাদিপশুর গায়ে লাগলে তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে গাভী পার্থেনিয়াম খেলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। পার্থেনিয়াম গাছ খেলে গবাদি পশু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আর এ ভাইরাসে আক্রান্ত পশুর মাংস খেলে মানুষের শরীরও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। যার ফলে মানব শরীরে দেখা দেয় অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ। এ ছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়। পার্থেনিয়াম আগাছা হাত দিয়ে স্পর্শ করলে বা চটকালে ছোট থেকে পরবর্তীতে বড় ধরনের রোগ দেখা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় হাত-পা চুলকায়, লাল হয়ে যায় এবং বৃহৎ আকারে ত্বকে ক্যান্সারের সৃষ্টি করে। আক্রান্ত ব্যক্তি ঘন ঘন জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং অসহ্য মাথা ব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভোগে।

এ আগাছায় ‘সেসকুইটারপেন ল্যাকটেনস’ নামক টক্সিন বা বিষ থাকে। এ বিষ মানুষসহ অন্যান্য জীবের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিষাক্ত পার্থেনিয়ামের মূল উৎপত্তিস্থল মেক্সিকো। সেখান থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকা, আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশেসহ বিভিন্ন দেশে।

সারিয়াকান্দি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. মাসুদুর রহমান বলেন, উদ্ভিদটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এ উদ্ভিদ সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর