কেউ বরফ ভাঙছে। কেউ ড্রাম টানছে। কেউ আবার গাড়ি প্রস্তুত করছে। জেলেরাও জাল হাতে হ্রদ পাড়ে অপেক্ষমান। রাত ১২টা এক মিনিটে শুরু হয় মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। দীর্ঘ চারমাস ৬ দিন পর এমন কর্মযজ্ঞতা ফিরে এসেছে রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের ফিসারি ঘাটে।
শনিবার রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান। এরপর শুরু হয় মৎস্যজীবী ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও জেলেদের প্রাণঞ্চলতা। টানা বেকার সময়ের পর আবারও কর্মসংস্থান ফিরে পেয়ে কাজে উচ্ছাসিত ফিসারি ঘাটের মৎস্যজীবীরা।
রাঙামাটি ফিসারি ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যারের আগ মুহূর্তে শুরু হয় মৎস্যজীবীদের ব্যস্ততা। রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের ২৬ হাজার জেলাসহ প্রায় ১০০জন ব্যবসায়ীর অধিনে শ্রমিক ও কর্মচারী আছে প্রায় ২০ হাজার। সবমিলিয়ে অর্ধলাখ মানুষই আছে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল। টানা সময় বেকার থাকার পর নতুন করে কর্মসংস্থা গড়ে তুলেছে এসব শ্রমিক ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে কথা হয় ফিসারি ঘাটের মৎস্য শ্রমীক সুশীল চাকমার সাথে। তিনি বলেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞায় অনেকটা বেকারই ছিলাম। অন্য কোন কর্মসংস্থান ছি লনা। অভাবে চলেছে বেকার জীবন। এখন কাজ ফিরে পেয়ে অনন্দ লাগছে।
একইভাবে আনন্দিত ফিসারি ঘাটের ট্টাক চালকরাও। কথায় হয় ট্টাক চালক মো. জসিম উদ্দীনের সাথে। তিনি বলেন। রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের আহরিত মাছগুলো নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিয়ে যায় ট্রাকে করে বাজারজাত করার জন্য। আয়ও হয় অনেক। কিন্তু ফিসারি বন্ধ হয়ে গেলে তেমন কাজ পাওয়া যায় না। বেকার থাকতে হয়। জীবন চলতে কষ্ট হয়ে যেতো। এখন আবারও কর্ম ব্যস্ততা শুরু হয়েছে।
রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাফুজ উদ্দীন বলেন, বন্ধকালীন সময়ে কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন হয়েছে আশাকরি। কিন্তু বন্যার কারণে কিছুটা শঙ্কা থেকে যায়। কারণ হ্রদের পানি এখনো পরিষ্কার হয়নি। জেলেরা ভালোভাবে জাল ফেলতে পারলে মাছের বাম্পার আহরণ হবে। সরকারের রাজস্ব খাতে যেমন আয় বৃদ্ধি পাবে। তেমনি দেশে মিঠা পানির মাছের চাহিদাও মিটবে।
রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের উন্নয়ন ও বিপনি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বিস্তারের জন্য কাপ্তাই হ্রদে কিছু সময় মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরপ করা হয়। কিন্তু এটা আসলে মৎস্যজীবীদের জন্য লাভ। কারণ মাছের প্রজনন হলে হ্রদে মাছ বৃদ্ধি পাবে। মা মাছ রক্ষা পেলে বংশবিস্তার হবে। তাই বছরের মাত্র তিন মাস কিংবা চারমাস হ্রদে মাছ শিকার করা বন্ধ থাকে। তিনি আরও বলেন, বন্ধকালীন সময় অবৈধ মাছ নিধনসহ পোনা মাছের রক্ষণাবেক্ষণে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিএফডিসির সকল কর্মকর্তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। আশাকরি মাছ আহরণে সফলতা আসবে।
প্রসঙ্গত, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে ৬৬টি দেশিও প্রজাতির ও ৬টি বহিরাগত প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। যা প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল