চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সদ্য প্রকাশ হওয়া এইচএসসির ফলাফলে বা নম্বর প্রদর্শনে নানা অসংগতি দেখা দিয়েছে। এই অসংগতি বা ভুল-ত্রুটি ঘিরে বোর্ডের আওতাধীন বিভিন্ন কলেজ ও শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার (২০২১ সালে) পরীক্ষায় গ্রুপভিত্তিক যে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে, এর প্রতিটিতে দুটি করে পত্র রয়েছে। প্রতি পত্রে ১০০ করে দুটি পত্র মিলে একটি বিষয়ে মোট নম্বর (মার্কস) ২০০। অর্থাৎ একটি বিষয়ে ২০০ নম্বরের মধ্য থেকেই শিক্ষার্থীদের নম্বর দেওয়া হয়। কিন্তু মোট নম্বর ২০০ হলেও দুই পত্র মিলে একটি বিষয়ে ২০০-এর বেশি নম্বরও পেয়েছে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী। এসব নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে নানা গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ফলাফল ঘোষণার পরপর ওয়েবসাইটে পাওয়া নম্বর ফর্দে প্রাপ্ত নম্বর সন্ধ্যা গড়াতেই পাল্টে গিয়ে আরও কম/বেশি হয়ে যায়। অন্যদিকে কোনো কোনো নম্বর ফর্দে আবার প্রাপ্ত নম্বর ‘এ’ প্লাসের হলেও গ্রেড উল্লেখ করা হয়েছে ‘এ’ মাইনাস। এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে এমন অবস্থায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এ ঘটনার সঠিক তদন্তের স্বার্থে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল আলীম। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি কঠোর নজরদারির মধ্যে রেখেছেন। এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে এলে এবং বোর্ডের কেউ জড়িত থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। জড়িত যে-ই হোক শাস্তি পেতেই হবে।’ এ ছাড়া বোর্ডের পক্ষ থেকে থানায় জিডিও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও অভিভাবক বলেন, বোর্ডে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একাধিক গ্রুপ-উপগ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। দায়িত্বশীলদের প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে বোর্ডেরই একটি চক্র এসব ঘটনা ঘটাতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই বোর্ডের চেয়ারম্যান নেই। ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চলছে সব কাজ। এখানে বোর্ডের বাইরের বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এসব দ্রুত চিহ্নিত করা না গেলে বড় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বোর্ডের অধীন এইচএসসির ফলাফল ঘোষণার পর তাতে ব্যাপক অসংগতি দেখা দিয়েছে। বোর্ডের ওয়েবসাইটে এসব দেখে সোমবার শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল আলীম এক অফিস আদেশে বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে পটিয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোজাম্মেল হককে। অন্য দুই সদস্য হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এইচ এম সাজেদুল হক ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সহকারী সচিব সম্পাতা তালুকদার। বিষয়টি তদন্ত করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে একই ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সোমবার শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে এ জিডি করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির বলেন, এইচএসসির ফল প্রকাশের পর বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করা পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরে ব্যাপক অসংগতি ধরা পড়ে, যা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ বোর্ড কর্তৃপক্ষের।
এমন অভিযোগেই শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এ জিডি তদন্তে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন। অনুমতি পেলে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হবে।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ