ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

রাবির হলে ছাত্রলীগের নৈরাজ্য, প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস
রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) হলগুলোতে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব, মারধর ও হুমকি-ধামকির প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। এই নৈরাজ্য প্রতিরোধ করে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতীকী অনশন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কয়েক দফায় ক্যাম্পাসে এসব প্রতিবাদ জানানো হয়। 

মানববন্ধনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আল-মামুন বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে হলগুলো শিক্ষার্থীদের বসবাস উপযোগিতা হারাচ্ছে। হলে নিয়মিত নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে থাকার পরিবেশ নাই। আমার ছাত্র কৃষ্ণ রায়কে শিবির তকমা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। হিন্দু জানার পরেও নির্যাতন করতে পিছপা হয়নি ছাত্রলীগ। তারা এখন গুণ্ডাতন্ত্রে বিশ্বাসী। গুণ্ডামির মাধ্যমে তারা টিকে থাকতে চায়।’ তাই অবিলম্বে ক্যাম্পাসে এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, ‘একটা সিটের মূল্য যদি ১০ হাজার টাকা হয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিভাবে হলে উঠবে? ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কৃষ্ণ, যার বাবা নাই। ঘটনার পর তার ভয়ংকর অবস্থা। এখনও সে ঠিকমতো দাঁড়াতে পারে না। তাকে রুমে নিয়ে ভয়ংকর নির্যাতন করা হয়েছে। সে এখন ভীতসন্ত্রস্ত। এই দায়ভার কে নিবে? প্রশাসনের উপর আমাদের কোন আস্থা নেই। তাদের দৌড় তদন্ত কমিটি পর্যন্ত। তাই এখনি সোচ্চার হোন। এই নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করুন।’ 

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল বাকী, অধ্যাপক এবিএম সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসাইন বকুল। তারা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সাথে নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। এসময় বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে ছাত্র নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জোহা চত্বরে অনশনে বসেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এই অনশন পালনের ঘোষণা দেন তিনি। অনশনকালে ড. ফরিদ বলেন, শিক্ষার্থী আজ ক্যাম্পাসে পরাধীন। তারা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে না। আজ নিজের অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। হলে হলে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব ও নির্যাতনের ফলে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। শুধু এখানেই নয়, চট্রগ্রাম ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও একই চিত্র। এই নৈরাজ্য চলতে দেয়া যায় না।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার কথা জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, এসব ঘটনা ঘটলে প্রশাসন তদন্ত কমিটির নামে কেবল কালক্ষেপণ করে। তারা বলে, এসব মীমাংসা হয়ে গেছে। একটা ছেলেকে হলে নৃশংস নির্যাতন করা হচ্ছে, তারা বলে মীমাংসা হয়েছে। আমি বুঝি না এটা কিভাবে মীমাংসা হয়। অভিযোগ দেয়ার পড়ে তাকে অভিযোগ তোলার জন্য বাধ্য করা হয়, অথচ প্রশাসন এটাকে বাহবা দেয়। এমন খেলা আমরা চাই না। যারা অভিযোগ দিচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি এসব অভিযুক্তদের  বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

এই অনশনে সংহতি জানিয়ে অংশ নেয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও রাকসু আন্দোলন মঞ্চ। এর আগে, বুধবার রাতে হলে ছাত্র নির্যাতনের প্রতিবাদ ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়ে মশাল মিছিল করেছেন ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বাম ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের এমন নৈরাজ্য ও আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান। অবিলম্বে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ না হলে তীব্র আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে কৃষ্ণ রায়কে শিবির তকমা দিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এতে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমানসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। তবে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর