ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সামান্য ঘটনায় অস্থির তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
প্রতিদিন ডেস্ক

বরিশালে বহিরাগতদের হামলায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ১০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া দুই ছাত্র পরীক্ষা দিতে না পারায় এর প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসি বিভাগে ছাত্রলীগ তালা দিয়ে দেয়। এতে বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে, হলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বরিশাল : কোটা সংস্কারের দাবিতে বুধবার থেকে বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে সোমবার রাত ৯টার দিকে কলেজের ইলেকট্রনিক বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব ভুইয়া ও শাহরিয়ার তানভীরসহ বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ঢুকলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বহিরাগত মুখোশধারীরা ক্যাম্পাসের হলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের বেধরক মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। এতে অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থীকে শেরেবাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাত ১০টার দিকে বরিশাল-ভোলা সড়কের কলেজ ক্যাম্পাস সংলগ্ন দুর্গাপুর এলাকা অবরোধ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান মুকুল জানান, ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শিক্ষার্থীতের দুই পক্ষ সংঘাতে লিপ্ত হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করলে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে এবং বিচারের আশ্বাস দিয়ে আধাঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার করে। তবে গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় হামলার অভিযোগ করেনি বলে জানান ওসি মুকুল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তালা ঝুলিয়েছে শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ ভার্সিটি এক্সপ্রেসের (ভিএক্স) কর্মীরা। ফলে বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ৩০১ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিভাগের সভাপতি আসমা আক্তার। বিভাগীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর মাসে বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ২০৪ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা চলাকালীন মাহমুদুল ইসলাম হাসিব ও হাবিবুর রহমান হাবিব নামে দুই শিক্ষার্থীর নকল ধরেন দায়িত্বরত শিক্ষক সভাপতি আসমা আক্তার। ওই পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাসেম। পরে তাদের পরীক্ষার খাতা রেজিস্ট্রার অফিসে পাঠানো হলে গত এক বছরেও তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি চবি শৃঙ্খলা কমিটি। যার কারণে, ওই দুই শিক্ষার্থীর দ্বিতীয় বর্ষের রেজাল্ট আসেনি। এমনকি তারা তৃতীয় বর্ষেও ভর্তি হতে পারেননি। গত এক বছরেও তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় তারা বিভাগের অফিস ও পরীক্ষার হলে তালা ঝুলিয়ে দেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হাসিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার দ্বিতীয় বর্ষের রেজাল্ট বের হয়নি। আমি তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিতে পারছি না। এ বছর পরীক্ষা দিতে না পারলে আমি ছাত্রত্ব হারাব। বিভাগ থেকে আমার খাতা সময়মতো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়নি। চার মাস পরে পাঠানো হয়েছে। তাই তারা আর সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। চবি ছাত্রলীগের উপগ্রুপ ভিএক্সের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একটা ছেলে পরীক্ষায় বহিষ্কৃত হয়েছিল। কিন্তু তার বিষয়ে দুই মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসার কথা থাকলেও এক বছরেও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাজ হলেও বিভাগ এর দায় এড়াতে পারে না। তাই তার বন্ধু-বান্ধব বিভাগে তালা লাগিয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) আবাসিক হলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় লাঠিসোঁটা নিয়েও উভয় পক্ষের কিছু নেতা-কর্মীকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সোমবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হলে এ ঘটনায় হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, হলে সিট নিয়ে কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা সমস্যা হয়েছিল বলে জেনেছি। তবে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু কয়েক দিন আগে তাফকিফ আল তৌহিদকে নবাব আবদুল লতিফ হলের দায়িত্ব দেন। তিনি ওই হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের (২০১৫-১৬) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সোমবার রাত ৮টার দিকে তৌহিদ এক জুনিয়র কর্মীকে হলে আসন দেওয়ার জন্য নাট্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী বিবেক সাহাকে ৩২২ নম্বর কক্ষ থেকে নামিয়ে দেন। এ সময় বিবেক সাহাকে কক্ষ থেকে বের করতে বাধা দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকারের অনুসারী। বিষয়টি নিয়ে তাফকিফ আল তৌহিদ ও শামীমের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। এ সময় শামীম ও তার অনুসারী নেতা-কর্মীরা হলে দেশি অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের শতাধিক অনুসারী হলের সামনে জড়ো হয়ে মহড়া দেন। এ সময় তাদের হাতে বাঁশের লাঠি ও পাইপ দেখা যায়। একপর্যায়ে শামীমের অনুসারীরা হলের ভিতরে অবস্থান নেন এবং সভাপতি-সম্পাদকের অনুসারীরা হলের বাইরে অবস্থান নেন। এ নিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। পরে বড়দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর