সিট দখল, খাবার ও ইন্টারনেট সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলো। প্রশাসনের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না থাকায় বিপাকে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা অবগত। বিভিন্ন জটিলতায় সমস্যাগুলো নির্মূল সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইতিমধ্যে হলগুলোতে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। ভর্তির পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। কিন্তু হলে আধিপত্য বিস্তারে বিভিন্ন কায়দায় সিট দখলে নিচ্ছে ছাত্রলীগ। গত তিন মাসে হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে আবাসিক শিক্ষার্থীদের মারধর ও হুমকির ডজনের বেশি অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
এদিকে, ধীরগতির ইন্টারনেট ও ডাইনিংয়ে নিম্নমানের খাবারে দুর্ভোগ চরমে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। খাবারের মান ঠিক রাখতে পূর্বে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু মান বাড়েনি। সম্প্রতি ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হলে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে স্থগিত হয়। তবে এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেই।
গতবছর ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির জন্য হলগুলোতে ব্রডব্যান্ড সংযোগের সিদ্ধান্ত হয়। তবে ৩টি হলে সংযোগ দেওয়া হলেও অন্য হলগুলো এই সুবিধা পায়নি। এদিকে ওয়াইফাই গতি না থাকায় প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ও দাবি জানালেও প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। ফলে এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্র-সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান কোরবান বলেন, হলে সিট দেয় প্রশাসন, হুমকি-ধমকি ও মারধর করে নামিয়ে দেয় ছাত্রলীগ। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে তদন্ত কমিটি হয় কিন্তু অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হয় না। খাবারসহ অন্যান্য সমস্যার অভিযোগ দিলেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, হলে সিট দখল, খাবারসহ অন্যান্য সকল সমস্যা নিত্যদিনের ঘটনা। যার মূলে রয়েছে জবাবদিহিতার অভাব। দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র প্রতিনিধি নেই। ফলে ছাত্রদের হয়ে কথা বলার কেউ নেই। হলে ছাত্রলীগ সিট দখল, মারধর ও হুমকি দেয়, ফের তারাই মিটমাট করে বলে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছে। কিন্তু অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। হলে এসব সমস্যা কেবল ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, জবাবদিহিতার অভাবে হলে এসব সমস্যা বাড়ছে। কেননা অনেক অপরাধের শাস্তি হয় না। সিট দখলের বিষয়টি জেনেও প্রশাসন যেন ঘুমিয়ে থাকে। অনেক অপরাধীর যথাযথ শাস্তি হয় না। হল প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট নেতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত জরুরি। অনলাইনেও সিট বরাদ্দ নিশ্চিত করা যায়। খাবার সমস্যা নিরসনে প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার আয় ও কৃষি প্রকল্পের উদ্বৃত্ত অর্থ কাজে লাগানোর কথা জানান তিনি।
এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হলে আবাসন সংকটের কারণে পর্যাপ্ত সিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, আবার অনেকে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে হলে থাকছে। এতে হলের অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছে। একইভাবে খাবার ও অন্যান্য জটিলতাও কমছে না। বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও বারবার সরে আসতে হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই