ঢাকা, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

জাবিতে ধর্ষণ : তৃতীয় দিনেও চলছে আন্দোলন
জাবি প্রতিনিধি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বহিরাগত এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় তৃতীয় দিনেও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চলমান রয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’র ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ মানববন্ধনে ক্লাস-পরীক্ষা রেখে প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন।

এ সময় বক্তারা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি, আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি জানান। এ ছাড়া যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির অব্যাহতির দাবিও জানানো হয়। এসব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মনিকা ইয়াসমিন বলেন, আমরা দেখেছি ক্যাম্পাসে যত ধরনের অপকর্ম ঘটে তার পেছনে মদদদাতা একটি গোষ্ঠী থাকে। যখন তাদের অপকর্ম সামনে আসে, তখন ওই বিশেষ গোষ্ঠী দাবি করে অপরাধীর কোনো দল নেই, অপরাধীর পরিচয় অপরাধী। আজকে আমরা এখানে শুধু এক মোস্তাফিজের শাস্তির জন্য আন্দোলন করছি না। যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনিরও শাস্তি দাবি করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, আজকে আমরা দল মত নির্বিশেষে সবাই এখানে দাঁড়িয়েছি। গোটা বাংলাদেশের জন্য এটা একটা উদাহরণ হয়ে থাকা উচিত। দোষ শুধু মোস্তাফিজ, মানিকদের না। দোষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও, যারা এই সকল মোস্তাফিজ, মানিকদের লালন করে।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলী বলেন, ধর্ষণের ঘটনার ৩ দিন হয়ে গেলো এখনো হল থেকে অছাত্রদের বের করা হয়নি। প্রশাসন আমাদের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার কথা বলে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। এমনকি অভিযুক্তদের সনদ স্থায়ীভাবে বাতিলের দাবি করলে তারা সনদ স্থগিত করে। আমরা বারবার দেখেছি উপাচার্য যেকোনো আন্দোলনের সময় আশ্বাস দিয়ে তার কথা বাস্তবায়ন করে না। যেমনটি আমরা মাহমুদুর রহমান জনির যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে দেখেছি। দেড় বছর পার হয়ে গেলেও জনিকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। বহিরাগত নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের খোঁজে বের করতে প্রক্টর, প্রভোস্ট না গিয়ে তারা দুজন ছাত্রলীগ নেতাকে পাঠিয়েছে অপরাধীদের ধরে আনার জন্য। এ থেকে বোঝা যায় প্রক্টর, প্রভোস্ট তাদের পদে থাকার নৈতিক অবস্থান হারিয়েছে।

নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ক্যাম্পাসে যত ধরনের অপরাধ ঘটে সেগুলোর সাথে কোনো না কোনোভাবে অছাত্ররা জড়িত থাকে। আবার সেসব অপরাধীদের আশ্রয় দেয় প্রশাসন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো অভিভাবক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবৈধদের অভিভাবক। আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের (৪৮ ব্যাচ) শিক্ষার্থী মো. হাসিব জামানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এএসএম আনোয়ারুল্লাহ ভুঁইয়া, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. গোলাম রব্বানী, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।

এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি, অছাত্রদের হল ত্যাগসহ গত ৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছে জাবি শিক্ষক সমিতি।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর