ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পার্বত্য অঞ্চলে কিছু গোষ্ঠী বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে : চবি উপাচার্য
অনলাইন ডেস্ক
সংগৃহীত ছবি

পার্বত্য অঞ্চলে কিছু গোষ্ঠী উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এদেশের মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো আমাদের সংবিধানে বিস্তারিত বলা আছে। বঙ্গবন্ধু এ বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখতেন বলেই সংবিধানে সব ধর্ম বর্ণের মানুষের অধিকার সমানভাবে যুক্ত করেছেন।  

চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশের (সিসিআরএসবিডি) আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনুষ্ঠিত 'সশস্ত্র সংঘাত ও তথ্য বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে ছাত্র-যুবসমাজের ভূমিকা' শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের।

মঙ্গলবার বেলা ২টায় চবি উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তন্ময়ী হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, বিশেষ অতিথি চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে। বক্তব্য দেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সিসিআরএসবিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মাহফুজ পারভেজ, সিসিআরএসবিডির পরিচালক রাজকুমার সুই চিং প্রু, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম এবং আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক।

অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে হবে। শান্তি একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে। পার্বত্য এলাকার পিছিয়ে পড়া তরুণ সমাজকে আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। অস্ত্রের মুখে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। পাহাড়ে যেভাবে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ চলছে, তা কারও অজানা নয়। আমাদের সচেতনভাবে সেগুলো মোকাবিলা করতে হবে।  

অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ দুই যুগ পরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে যে শান্তিচুক্তি হয়েছিল, তা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে একটি অনন্য ঘটনা। কারণ তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই এ চুক্তি হয়েছিল। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্যে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে স্কুল, কলেজ, মেডিক্যাল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ও করা হয়েছে। 

সিসিআরএসবিডির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দ্বন্দ্ব থেকে সংঘাত, সেখান থেকে সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নিয়েছে কুকি-চিনের এ বিদ্রোহ। ২০২১ সালের পরেই দেখা যাচ্ছে জো-জাতীয়তাবাদ। এটি খুব উগ্র একটি জাতীয়বাদ বলেই ধারণা করা হচ্ছে। যার ফলে এ পার্বত্য অঞ্চল ক্রমান্বয়ে অশান্ত হয়ে উঠছে। মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাচীন ইতিহাসই আমরা স্পষ্ট করতে পারিনি। তাই আমাদের যুবসমাজ বিভ্রান্ত। এগুলো আমাদের জানতে হবে, জানাতে হবে।

সিসিআরএসবিডির পরিচালক রাজকুমার সুই চিং প্রু বলেন, দুঃখের বিষয় এ অঞ্চলে সংঘাতের কারণে আমাদের মানুষের মাঝে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আমাদের সংঘাতের কারণগুলো উদঘাটন করতে হবে। তথ্য বিভ্রান্তি আমাদের এ সংঘাতের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মারমা সম্প্রদায় শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতি ঐতিহ্যগতভাবে একমত। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আমরা শিখতে পারি শান্তি স্থাপনে যুবসমাজ অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। তাই আপনাদের সচেতনতা এবং সহযোগিতাই কাম্য।  

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু খুব দ্রুত পার্বত্য অঞ্চলের সংঘাত নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ ছাড়া ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেছিলেন। ইতিমধ্যে নৃগোষ্ঠীর ভাষাগুলো সংগ্রহের জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো মূলত তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্যই। যুবসমাজের প্রতি বিশেষ অনুরোধ, আমাদের মধ্যে বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু ভালো করে জানতে হবে প্রকৃত ঘটনা কী? প্রয়োজনে গবেষণা করতে হবে, আলোচনায় বসতে হবে, যুক্তিতর্কের মাধ্যমে বিষয়গুলো সমাধান করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের সঙ্গে যে শান্তিচুক্তি, সেখানের ৭৫টি দাবির মধ্যে ৫০টির বেশি ইতিমধ্যে পূরণ করা হয়েছে। অথচ আমরা দেখছি একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী সংঘাত সৃষ্টি করছে। যার ফলে শান্তিচুক্তি ভঙ্গ হওয়ার ব্যাপক আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। সেটা একবার পার্বত্য অঞ্চল ঘুরে এলেই উপলব্ধি করা যায়।  

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত



এই পাতার আরো খবর