ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

হাবিপ্রবি শিক্ষার্থী কনা এখন ‘সর্পকন্যা’
রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর
কামরুন নাহার কনা

ভয় কিংবা আতঙ্কের নাম সাপ। সেটা বিষধর হোক আর না হোক। সাপ দেখলে ভয় পাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় এই সাপেরও ভূমিকা অনেক। এরপরও সাপ দেখলে মেরে ফেলতে এগিয়ে আসেন বেশির ভাগ মানুষ।

কিন্তু ভয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিবেশের জন্য উপকারী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে এসে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী কামরুন নাহার কনা। এখন তিনি সাপ মারতে দেন না। বরং কোথাও সাপ দেখা গেলে উদ্ধার করে এনে বনে-জঙ্গলে ছেড়ে দেন। বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং জনগনের মধ্যে সচেতনতাই তার মূল লক্ষ্য বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও সাপ দেখা গেলে আগে সকলেই মেরে ফেলতেন কিংবা মারার চেষ্টা করতেন। বর্তমানে কেউ আর সাপ মারে না। সাপ দেখামাত্রই ফোন করে কামরুন নাহার কনাকে। কনাও ছুটে যান সাপ উদ্ধারে। দিনে কিংবা রাতে যেকোনো সময় হোক না কেনো, কনা সাপ উদ্ধার করে জীবন রক্ষা করেন সাপের, আর আতঙ্ক দূর করেন জনমানুষের।

হাবিপ্রবি ক্যাম্পাসের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা তার উপাধি দিয়েছেন ‘সর্পকন্যা’। এরই মধ্যে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক পরিচিত পেয়েছেন তিনি। হাবিপ্রবির ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সাইন্স অনুষদের অনার্স চূড়ান্ত বর্ষের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী কামরুন নাহার কনা। তিনি ৩ বছর যাবৎ সাপ নিয়ে কাজ করছেন। এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনে।

এখন পর্যন্ত শতাধিক সাপ উদ্ধার করেছেন কনা। শুধু সাপ সংরক্ষণ নয়, বণ্যপ্রাণী নিয়েও কাজ করছেন। বিষ নেই এমন সাপের মধ্যে ঘরগিন্নি, সুতানলি, জলঢোঁড়া, দাঁড়াস এবং বিষধর সাপের মধ্যে শঙ্খিনী, কালাচ, পাতিকালাচ, খৈয়া গোখরা, পদ্মগোখরাও আছে। তবে সবচেয়ে বেশি উদ্ধার করেছেন শঙ্খিনী সাপ।

এ ব্যাপারে কামরুন নাহার কনা বলেন, করোনার প্রকোপের সময় গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। নদী এলাকায় সাপ দেখলেই মানুষজন মেরে ফেলে। মানুষের সাপের প্রতি নির্মম আচরণ। সাপ দেখলেই বীরত্ব প্রদর্শনে নিষ্ঠুরতা দেখায়। এতে খুব খারাপ লাগত। মনস্থির করি, পরিবেশের জন্য উপকারী এই প্রাণীরক্ষায় কাজ করবো। এরপর ক্যাম্পাসে আসি, তারপর বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপগুলো খুঁজতে থাকি, যারা বাংলাদেশে সাপ নিয়ে কাজ করে কি না ? এরপর একটা গ্রুপের সাথে সংযুক্ত হই এবং ৬ মাস ক্লাস করি সাপের উপরে। সেখানে পরীক্ষা দেই। পরীক্ষা দেওয়ার পরে সরাসরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার যোগ্য মনে করেন এবং তাদের কাছে প্রশিক্ষণ নেই। এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার ২০২২ সাল থেকে সাপ নিয়ে কাজ করা শুরু। এ পর্যন্ত হাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে শতাধিক সাপ উদ্ধার করেছি এবং ক্যাম্পাসে প্রত্যেক শিক্ষক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা সবাই positively গ্রহণ এবং কাজের অনুপ্রেরণা হিসেবে এগোতে সাহায্য করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আমি যেহেতু একজন প্রাণী চিকিৎসক, সেই হিসেবে বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করার এবং ভবিষ্যতে এই সাপ বিষয়টা মানুষের কাছে ভয়ের কারণ না হয়ে, মানুষ যেনো বিষয়টা খুব সহজভাবে নিতে পারে এবং সাপের সাথে মানুষের যে সহাবস্থানটা আছে, সেটা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি। বিভিন্ন স্কুল কলেজগুলোতে সেমিনার করছি। তাছাড়া যেই লোকালয়তে সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি, সেইসব লোকালয়গুলোতে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে সাপের যে ভয় আছে, সেটা দূর করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর