ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কোটা আন্দোলন: রাতভর যা ঘটল জাবিতে
জাবি প্রতিনিধি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) রাতভর বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভে অংশ নিতে যাওয়া ২ শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে মোবাইল ফোন তল্লাশি ও হেনস্তা করার অভিযোগে রবিবার দিবাগত রাত ১২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ঘেরাও করে রেখেছিলেন আন্দোলনকারীরা।

এর আগে, রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীরা জানান, চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার পায়তারা চলছে। এর প্রেক্ষিতে ওইদিন রাত সাড়ে ১১ টায় বটতলায় একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেন তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’, ‘আমরা কেন রাজাকার, জবাব চাই জবাব চাই’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দিতে বটতলায় জমায়েত হতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। 

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল এবং তাজউদ্দীন আহমদ হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মিছিলে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এমনকি, মিছিলে যাওয়ার সময় আটকে রেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আরমান আলম কাওসার ও আশিক মাহমুদ নামের ৪৯ ব্যাচের দুই শিক্ষার্থীর মোবাইল তল্লাশি ও হেনস্তা করেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে খবরটি জানতে পেরে রাত ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ঘেরাও করেন আন্দোলনকারীরা।

এসময়, বিক্ষুব্ধরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে দাবি করে হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চান। শুরুতে হল প্রভোস্ট ফুটেজ দেখানোর আশ্বাস দেন। সেসময়, আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দলকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর কথা বললে বাকি আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে তাজউদ্দীন আহমদ হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হল প্রদক্ষিণ করতে যান। ইতোমধ্যে হল প্রশাসন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ও অভিযুক্তদের সাথে আলোচনা করে আন্দোলনকারীদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে অস্বীকার করেন। যার ফলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাত ২ টার দিকে পুনঃরায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ঘেরাও করে এবং জড়িতদের শাস্তি দাবি করে।  

এসময় হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শাখা ছাত্রলীগের ৪ নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আররাফি চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের রাস্তা আটকে মিছিল করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় হলের ভিতরে আশ্রয় নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, ‘হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে হল প্রভোস্ট ছাত্রলীগকে উস্কে দেয়। হামলায় আমাদের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছে। আমরাও ছাত্রলীগকে প্রতিহত করেছি। যতোক্ষণ পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ না দেখানো হবে আমরা এখান থেকে যাব না।'

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, রাতে যে ঘটনা ঘটেছে সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এধরনের ঘটনার পর আমি প্রভোস্টের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মো. মোস্তফা ফিরোজ বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এতো রাতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না। আগামীকাল প্রশাসনের সকলে মিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিডি প্রতিদিন/এনএইচ



এই পাতার আরো খবর