ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পীর হাবিবুর রহমানকে সিলেটবাসীর অশ্রুসিক্ত বিদায়
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
পীর হাবিবুর রহমানকে সিলেটবাসীর অশ্রুসিক্ত বিদায়

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানকে শেষ বিদায় জানাল সিলেটবাসী। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অশ্রুসিক্ত শতশত শুভাকাঙ্ক্ষির উপস্থিতি তৈরি করেছিল শোকাবহ পরিবেশ। শেষ বিদায়কালে সবার ছিল একটাই চাওয়া ‘আল্লাহ যেন পরপারে জান্নাতবাসী করেন তাকে’।

পীর হাবিবুর রহমানকে শেষ বিদায় জানাতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে রবিবার রাত ৮টা থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। রাত ১০টায় তার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি এসে পৌঁছায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। তখন শহীদ মিনারে অপেক্ষা করছিলেন শত শত মানুষ। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর পীর হবিবুর রহমানের মরদেহ দেখে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এ সময় সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু ও শিক্ষাবীদ প্রণব কান্তি দেবের উপস্থাপনায় পীর হবিবুর রহমানের কর্মজীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন সিলেট সাংবাদিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক লিয়াকত শাহ্ ফরিদী, দৈনিক যুগান্তরের সাবেক ব্যুরো প্রধান রেজওয়ান আহমদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন সিলেট অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহ্ দিদার আলম নবেল, প্রথম আলো সিলেট অফিসের সাবেক নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল মেহেদী।

উপস্থিত সিলেটবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন পীর হাবিবুর রহমানের পরিবারের পক্ষ থেকে তার ছেলে আহনাফ ফাহমিন অন্তর ও ছোট ভাই পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি।

এসময় আহনাফ ফাহমিন অন্তর বলেন, ‘তার বাবা সারাজীবন দেশ, মানুষ ও গণতন্ত্রের কথা লিখে গেছেন। মানুষকে ভালোবেসে তিনি জীবন কাটিয়েছেন। তিনি সবসময় সিলেট ও সুনামগঞ্জের মাটি ও মানুষের গল্প করতেন। শীতের রাতে শহীদ মিনারে বিশাল মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে সিলেটের মানুষও তাকে মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসতেন।’

পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি বলেন, ‘পীর হাবিব ভাই যা বিশ্বাস করতেন তাই লিখতেন, তাই বলতেন। তিনি স্পষ্টবাদী ছিলেন। তিনি কখনো বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার ক্ষেত্রে কোনো আপস করেননি। সাংবাদিকতা পেশাকে তিনি ইবাদত মনে করতেন। তিনি সিলেটের মানুষকে হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসতেন। তার জীবনের শেষ লেখাটিও ছিল সিলেট নিয়ে।’

স্মৃতিচারণ শেষে পীর হাবিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় তার মধ্যে ছিল- সিলেট জেলা প্রেসক্লাব, সিলেট প্রেসক্লাব, ইলেকট্রিনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-ইমজা, সিলেট সাংবাদিক ইউনিয়ন, সিলেট ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ প্রতিদিন সিলেট অফিস, দৈনিক যুগান্তর সিলেট অফিস, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র, সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, সিলেট জেলা ও মহানগর জাসদ, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি, সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থা, সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট ক্লাব, সিলেট স্টেশন ক্লাব, টিলাগড় ক্লাব, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, যুক্তরাজ্য জাসদ, ইনোভেটর, দেশ ফাউন্ডেশন যুক্তরাজ্য, হৃদয়ে একাত্তর, বঙ্গবন্ধু লেখক ফোরাম, গোবিন্দগঞ্জ আবদুল হক স্মৃতি কলেজ, আমরা মুক্তযোদ্ধা সন্তান, জগন্নাথপুর সমিতি, সুনামগঞ্জ সমিতি, সিলেটভিউটোয়েন্টিফোরডটকম, বাংলাভিউ, বাধন সাহিত্য সংস্থা, আহ্বান সাংস্কৃতিক সংগঠন, গণমাধ্যম কমিশন, ইব্রাহিম স্মৃতি সংসদ, বাংলাদেশ শহিদ স্মৃতি সংসদ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বন্ধু এক্সপ্রেস সুনামগঞ্জ।

এক ঘণ্টা সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাত ১১টায় মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। 

উল্লেখ্য, শনিবার বিকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পীর হাবিবুর রহমান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শনিবার বাদ এশা রাজধানীর উত্তরা ৪ নং সেক্টর পার্ক জামে মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে পীর হাবিবুর রহমানের মরদেহ। এরপর বাদ জোহর সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় মসজিদে এবং নিজ গ্রাম মাইজবাড়ীতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে পিতা-মাতার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন পীর হাবিবুর রহমান।

বরেণ্য সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমানের জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ শহরে।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 



এই পাতার আরো খবর