ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ব্যতিক্রম কেবল মেয়র আরিফ
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেট বিএনপির এক সময়ের দুর্দণ্ড প্রতাপশালী নেতা এম. সাইফুর রহমান ও এম. ইলিয়াস আলীকে যেন ভুলতে বসেছে সিলেট বিএনপি। সিলেটে অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির গণসমাবেশ উপলক্ষে মহানগর প্রায় ঢেকে ফেলা দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুন-তোরণে নেই কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া সিলেটের এই নেতার। 

তবে ব্যতিক্রম সিলেটের আরেক বিএনপি নেতা, দলীয় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার প্রতিটি ব্যানার-ফেস্টুনে রয়েছে এম. সাইফুর রহমান ও এম. ইলিয়াস আলীর ছবি। 

সাইফুর ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাদের একজন। দায়িত্ব পালন করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে। ছিলেন একাধিকবারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী। আর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার আগে ইলিয়াস ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলার সভাপতি। একসময় দুই নেতায় বিভক্ত ছিল সিলেট বিএনপি। দু’জনের হাত ধরে তৈরি হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। সিলেটে দলীয় কোনো অনুষ্ঠান হলে পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন সবকিছুতেই ব্যবহার করা হতো এ দুই নেতার ছবি। কিন্তু হঠাৎ করে যেন সাইফুর ও ইলিয়াসকে ভুলে গেছে সিলেট বিএনপি। 

আগামীকাল শনিবার (১৯ নভেম্বর) বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে সিলেট নগরী সাজানো হলেও কোথাও নেই এ দুই নেতার ছবি। তবে ব্যতিক্রম কেবল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার বিলবোর্ড, পোস্টার ও ব্যানারে দেখা গেছে এ দুই নেতার ছবি। সমাবেশস্থল সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠ, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, রিকাবিবাজার, উপশহরসহ বিভিন্ন স্থানে লাগানো সিসিক মেয়রের ব্যানারে সাইফুর রহমান ও ইলিয়াস আলীর ছবি শোভা পাচ্ছে। দলের প্রতিষ্ঠাতা, দলীয় চেয়ারপার্সন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে সিলেটের এ দুই নেতার ছবি সম্বলিত বিলবোর্ড ও ব্যানার লাগিয়েছেন তিনি। 

একসময় সাইফুর রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল ইলিয়াসের। ইলিয়াস বলয়ের বিপরীতে দলীয় রাজনীতি করেছেন তিনি। কিন্তু সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশে তিনি সাইফুরের সাথে স্মরণ রেখেছেন ইলিয়াসকেও। 

বর্তমান প্রজন্মের নেতাকর্মীরা দলে সাইফুর ও ইলিয়াসের অবদানের কথা জানেন না বলেই এই অবমূল্যায়ন-মনে করছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। 

বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সমাবেশস্থল সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ এবং আশপাশের রাস্তাঘাটে এখন শোভা পাচ্ছে নানা রঙের বিশাল বিশাল ব্যানার, বিলবোর্ড ও ফেস্টুন। প্রচারমাধ্যমগুলোতে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবির সাথে দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন নেতার ছবি শোভা পাচ্ছে। কেউ নিজে আবার কেউবা নিজের পছন্দের নেতার পক্ষে এই বিলবোর্ড ও ব্যানার লাগিয়েছেন। শত শত নেতার ভিড়েও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান এবং সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি এম. ইলিয়াস আলীর ছবি। 

জীবিত অবস্থায় যারা সাইফুর রহমানকে পুঁজি করে দলীয় পদপদবী ও নানা সুযোগ সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন তাদের ব্যানার ও বিলবোর্ডেও দেখা যায়নি তার ছবি।

একইভাবে ইলিয়াস আলীকে যারা রাজনীতির ধ্যানজ্ঞান ভাবতেন তাদের কাছেও উপেক্ষিত দীর্ঘদিন ধরে ‘নিখোঁজ’ এই নেতা। সিলেট যেখানে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে সেখানে কোথাও নেই একসময়ের দাপুটে এই নেতা। সবাই যেন ভুলতে বসেছে তাদেরকে। 

সাইফুর ও ইলিয়াসের ছবি না থাকা প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, সিলেটের নেতাকর্মীরা এ দুই নেতাকে মন থেকে শ্রদ্ধা করেন। এ দুই নেতার যেমন দলীয় রাজনীতিতে অবদান রয়েছে তেমনি সিলেটের উন্নয়নেও তাদের অবদান অসীম। গণসমাবেশ ঘিরে ব্যানার ফেস্টুন লাগানোর কাজটা নেতাকর্মীরা নিজ উদ্যোগ করছে। এ নিয়ে দলীয় কোন দিকনির্দেশনা ছিল না। তাই হয়তো সাইফুর রহমান ও ইলিয়াস আলীর ছবি বাদ পড়েছে। তবে গণসমাবেশে সিলেটের উন্নয়নে সাইফুরের অবদান যেভাবে তুলে ধরা হবে ঠিক একইভাবে ইলিয়াস আলীর সন্ধানেরও দাবি জানানো হবে।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত



এই পাতার আরো খবর