ঢাকা, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সিলেটে পিঠা উৎসবে প্রাণের উচ্ছ্বাস
শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

পৌষ পেরিয়ে সবেমাত্র মাঘে পা রেখেছে প্রকৃতি। এই সময়ে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে থাকে পিঠেপুলির উৎসব। কিন্তু নাগরিক জীবনে এমন উৎসবে মেতে ওঠার সুযোগ খুব কমই মিলে। শুক্রবার সিলেট নগরবাসীর সুযোগ হয়েছিল গ্রামবাংলার চিরায়ত পিঠা উৎসবে মেতে ওঠার। সেই সুযোগ করে দেয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শ্রুতি’। প্রতিবারের মতো এবারও তারা নগরীর সুবিদবাজারে ব্লু-বার্ড স্কুল মাঠে আয়োজন করে দিনব্যাপী পিঠা উৎসবের। এটি ছিল শ্রুতির ২১তম পিঠা উৎসব।

গ্রামের বাহারি নাম আর স্বাদের পিঠার সাথে শহুরে শিশু-কিশোরদের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তাই পিঠা উৎসবের খবর পেয়ে সকাল থেকে ব্লু-বার্ড স্কুল মাঠে ছুটে আসতে থাকেন তারা। সকাল ৮টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন বরেণ্য অভিনয় শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। উৎসবের মাঠজুড়ে বসানো স্টলগুলো সাজানো হয় বাহারি নাম ও স্বাদের পিঠা দিয়ে। পিঠার মধ্যে ছিল চুঙা পিঠা, ঝালা পিঠা, নকশী পিঠা, মেড়া পিঠা, ছৈ পিঠা, দিলখোশ পিঠা, মুস্কু পিঠা, পানতোয়া পিঠা, চিতই পিঠা, মঞ্জুরি পিঠা, খাফনা পিঠা, পাতা পিঠা অন্যতম। এসব পিঠার বেশিরভাগই হয়তো কখনো চেখে দেখা হয়নি শহুরে মানুষের। তাই পিঠার স্টলগুলোতে ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়। কেউ পিঠার স্বাদ পরখ করছেন, কেউ আবার বাসার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে ছিল ফটোসেশন। হরেক নামের পিঠার ছবি অনেকেই করেছেন নিজের মুঠোফোনে বন্দি। 

সিলেট নগরীর জেলরোড থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী পারিসা ফারিয়া বলেন, ‘বাসায় অনেক জাতের পিঠা তৈরি হয়, কিন্তু গ্রামীণ পিঠার কোন তুলনা হয় না। গ্রামে দাদু বাড়ি গেলে অনেক রকম পিঠা খাওয়ার সুযোগ হয়। কিন্তু শহরে এসব পিঠা পাওয়া যায় না। উৎসবে না আসলে একসাথে এতো পিঠার সাথে পরিচিয়ই হতো না। বাহারি নামের অনেক পিঠার স্বাদ নিয়েছি। কয়েক জাতের পিঠা বাসার জন্যও নিয়ে যাচ্ছি। এরকম উৎসব আমাদেরকে শেকড়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি শামসুল আলম সেলিম বলেন, ‘পিঠা আমাদের চিরায়ত গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু দিন দিন এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণ অনেক পিঠার সাথে আমাদের নতুন প্রজন্ম পরিচিতই নয়। এরকম উৎসব আমাদের নতুন প্রজন্মকে বাংলার চিরায়ত উৎসব ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে সাহায্য করে। তাদেরকে সৃজনশীল করে তোলে।’

পিঠা প্রদর্শনী ও বিক্রয় ছাড়াও উৎসবে দিনভর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, নাচ ও কবিতায় দিনভর মুখরিত ছিল পিঠা উৎসব। 

উৎসবের আয়োজক ‘শ্রুতি’র সদস্য সচিব সুমন্ত গুপ্ত বলেন, ‘বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে প্রতিবছর পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এবছর ছিল শ্রুতির উদ্যোগে ২১তম পিঠা উৎসব। প্রতিবারই এই উৎসবে নগরের সকল বয়সী মানুষ অংশ নেন। উৎসবে অংশ নিয়ে তারা একদিনের জন্য হলেও শেকড়ে ফিরে যান।’

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর