ঢাকা, শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

নবম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে দখল করে পাহাড়
অন্যের মালিকানাধীন পাহাড়ে বিচ্ছুর লোলুপ দৃষ্টি
চার্জশিট হওয়ার পর নথি হাওয়া
মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম
সামশুল হক চৌধুরী ওরফে বিচ্ছু সামশু

জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রামের পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরী ওরফে বিচ্ছু সামশুর বিরুদ্ধে এবার পাওয়া গেছে অন্যের পাহাড় দখলের অভিযোগ। দখলের আগে তিনি পাহাড়ে বসবাসকারীদের ওপর চালান অমানুষিক নির্যাতন। বিচ্ছু বাহিনীর সদস্যরা পাহাড় দখল করতে গিয়ে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণ করে দেয় ধর্ষণের হুমকিও। 

অন্যের সম্পদ নিজের কবজায় নেওয়ার পর তিনি শুরু করেন পাহাড় কাটা। পরে ওই পাহাড়ের মালিকপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে মহানগরের ডবলমুরিং থানায় মামলা করেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। কিন্তু বিচ্ছুর অদৃশ্য শক্তির ইশারায় হাওয়া হয়ে যায় সেই মামলার নথি।

জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরের অভিজাত এলাকা দক্ষিণ খুলশীতে দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পগ্রুপ এ কে খান কোম্পানির মালিকানাধীন পাহাড়ের ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তৎকালীন সময়ে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করা বিচ্ছু সামশুর। তিনি ওই পাহাড় অবৈধ দখল নিতে ও কাটতে কূটকৌশল অবলম্বন করেন। ওই পাহাড়ে বসবাসকারীদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে উচ্ছেদের পর শুরু করেন পাহাড় কাটা। এ কে খান গ্রুপের পক্ষ থেকে বিচ্ছু ও তার বাহিনীকে বাধা দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর সিডিএর কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। 

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর পাহাড় কাটার অভিযোগে বিচ্ছু সামশু ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় মামলা করেন সিডিএর তৎকালীন ইমারত পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, যার নম্বর ৫৮, তারিখ ২৯ জুলাই ১৯৯৯। সিডিএর মামলা দায়েরের পর তদন্তও শুরু করে পুলিশ। একই বছর বিচ্ছু সামশুসহ অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেয় ডবলমুরিং থানা পুলিশ। চার্জশিট নম্বর ৪২১, তারিখ ৩১ অক্টোবর ১৯৯৯।  কিন্তু অদৃশ্য শক্তির ইশারায় থমকে যায় সে মামলার কার্যক্রম। হাওয়া হয়ে যায় মামলার নথি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডবলমুরিং থানার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তৎকালীন সময়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে চার্জশিট দেয় পুলিশ। কিন্তু বর্তমানে এ মামলার উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য থানায় সংরক্ষিত নেই।’

বিচ্ছু বাহিনীর হাত থেকে ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় রক্ষা করতে ১৯৯৯ সালের ২৪ জুলাই সিডিএ চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন এ কে খান অ্যান্ড কো. লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী চট্টগ্রাম শহরে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ। কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা অবৈধভাবে আমাদের মালিকানাধীন আরএস জরিপের ১২৪১ এবং ১২৩৭ দাগের পাহাড় থেকে মাটি কেটে পাহাড় বিনষ্ট করছে। এ কে খানের নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা বাধা দেওয়া সত্ত্বেও তারা পাহাড় কাটছে।’ 

অভিযোগকারী পাহাড় কাটার জন্য তৎকালীন জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করা সামশুল হক চৌধুরী ওরফে বিচ্ছু সামশু, অহিদুল ইসলাম, হাতকাটা মোশারফ, কানা সেলিম, মোক্তার ও মজিদকে অভিযুক্ত করেন।

এ কে খান কোম্পানির অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ দিনের মাথায় ১৯৯৯ সালের ২৯ জুলাই মহানগরের ডবলমুরিং থানায় মামলা করেন সিডিএর তৎকালীন ইমারত পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। ওই মামলায় বিচ্ছু সামশুসহ তার ছয় সহযোগীকে আসামি করা হয়। 

দায়ের করা ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়, সিডিএর অনুমতি ছাড়া বেআইনিভাবে দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজার আরএস ১২৪১ এবং ১২৩৭ দাগের অন্তর্গত পাহাড় কাটছে নিম্ন দুষ্কৃতকারীরা। নিরাপত্তার কারণে তাদের কাজে সরাসরি বাধা দেওয়া যাচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে অবৈধ পাহাড় কাটা বন্ধ করার জন্য দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার করার অনুরোধ করা হচ্ছে।

ওই সময় পাহাড়ে বসবাসকারী বিচ্ছু বাহিনীর হাতে উচ্ছেদের শিকার এক পরিবারের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ কে খানের মালিকানাধীন পাহাড়ের ওপর নজর পড়ে বিচ্ছু বাহিনীর। পাহাড় কেটে অবৈধ দখলে নিতে ওইখানে বসবাসরত লোকজনের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করতে থাকে তারা। বিচ্ছু বাহিনীর মারধরের শিকার হয়ে ওই পাহাড়ে বসবাসরত সবাই পালিয়ে যায়।’

ওই সময় বিচ্ছু সামশুর উচ্ছেদের শিকার আরও এক পরিবারের সদস্যের সঙ্গেও কথা হয়। তখনকার ঘটনা মনে পড়লে এখনো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। ওই সময়ের উচ্ছেদের বর্ণনা দিয়ে ওই পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘বিচ্ছু সামশুর সন্ত্রাসী বাহিনী ঘর ফেলে চলে যেতে একের পর এক হুমকি দিতে থাকে। যাওয়ার আর কোনো জায়গা না থাকায় তাদের কথা অগ্রাহ্য করে বসবাস করতে থাকি। একদিন রাতে বিচ্ছু বাহিনীর লোকজন নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া বোনকে তুলে নিয়ে যায়। ঘর ছেড়ে চলে না গেলে তাকে গণধর্ষণের হুমকি দেয়। বোনের ইজ্জত বাঁচাতে ঘর ছেড়ে চলে যাই। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে কোথাও অভিযোগ করিনি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার মোহাম্মদ হাসানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ আল সিফাত



এই পাতার আরো খবর