চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের আওতায় নির্মাণ করা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দৃশ্যমান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের সুশীল সমাজ। প্রশ্ন উঠেছে ‘লোকচক্ষুর আড়ালে’ নিয়ে যাওয়া শহীদ মিনারের নকশা অনুমোদন নিয়েও। নতুন এ শহীদ মিনারে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব, আবেগ ও নান্দনিকতা ফুটে উঠেনি বলেও অভিযোগ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে সভা করে আগামী বিজয় দিবস মিউনিসিপ্যাল স্কুলের মাঠে করার ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র। আশ্বাস দিয়েছেন, অভিজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করে শহীদ মিনারকে দৃশ্যমান ও জনবান্ধব করার।
চট্টগ্রামের খ্যাতিমান নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, শহীদ মিনারের আগের অবয়ব ঠিক আছে। কিন্তু আগে যে রাস্তা কিংবা আশপাশের এলাকা থেকে মাথা উঁচু করে থাকা শহীদ মিনারটা আমরা দেখতাম, সেটা আর নেই। এক কথায়, শহীদ মিনারের বিশালতাটা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স একটা বিশাল স্থাপনা, কিন্তু পুরো স্থাপনার মধ্যে শহীদ মিনারটা একেবারে ছোট হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে কোন রকম করে দায়সারা হয়েছে, বা না দিলে নয় তাই এটা দিয়েছে এমন অবস্থা করা হয়েছে। আমরা বৈঠকে বলেছি শহীদ মিনার দৃশ্যমান কিভাবে করা যায়, আগের মতো কিভাবে খোলামেলা পরিবেশ আনা যায় তা দেখার জন্য। যে আর্কিটেক এটা করেছেন, তাকে আমরা বলেছি। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, আগে কেন বলা হয়নি। আমরা বলেছি আগে তো আমাদের বলা হয়নি, দৃশ্যমান হওয়ার পর দেখতেছি, তাই আপত্তি জানাচ্ছি।
এমন পরিস্থিতে শনিবার চট্টগ্রাম মুসলিম ইন্সটিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম বলেন, শহীদ মিনারের দৃশ্যমান না হওয়া এবং সিড়ি সঙ্কীর্ণ ও বয়োবৃদ্ধদের উপযোগী না হওয়া নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে। এ বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায় তা বুঝার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমরা একটি কমিটি করে নির্মাণাধীন শহীদ মিনারের স্থপতিদের পাশাপাশি চট্টগ্রামের অভিজ্ঞ অন্য স্থপাতিদের মতামত নিয়ে কীভাবে শহীদ মিনারকে দৃশ্যমান ও জনবান্ধব করা যায় তা নিয়ে কাজ করব আমরা। আজকের সভায় উপস্থিত সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হল এইবারের বিজয় দিবসে এই নির্মাণাধীন শহীদ মিনারে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করব না। মিউনিসিপ্যাল স্কুল প্রাঙ্গণে ১৬ ডিসেম্বর আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করব।
সভায় একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেনগুপ্ত, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাহিমউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ হারিছ ও কাজী আবু তৈয়ব, ১৪ দলীয় জোট নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দুনন্দন দত্ত, একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, সাংস্কৃতিক সংগঠক দেওয়ান মাকসুদ আহমেদ, কুতুবউদ্দিন চৌধুরী, মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, সাংবাদিক ওমর কায়সার ও কামরুল হাসান বাদলসহ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা উপস্থিতত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল