ঢাকা, সোমবার, ২২ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

জামায়াত ইস্যুতে সাবেক ও বর্তমান এমপির বাগযুদ্ধ
ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ফের আলোচনায় যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নিবন্ধন হারানো রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। দলটির ঘাঁটি সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সাবেক ও বর্তমান এমপিই মূলত আলোচনায় এনেছেন জামায়াতকে। বর্তমান এমপিকে ‘জামায়াতের এমপি’ সম্বোধন করে রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টি করেছেন সাবেক এমপি। ইতিমধ্যে একজন অন্যজনকে অভিযুক্ত করে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।

বর্তমান এমপি এম এ মোতালেব বলেছেন, সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর অতীত ও বর্তমানের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জামায়াতের ছায়া আছে। তাই তার হাতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে। চট্টগ্রামের আর কোনো এমপি ছিল না, যার হাতে এতো বেশি সংখ্যক নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এখন তিনিই আবার আওয়ামী লীগের জন্য দরদ দেখাচ্ছেন। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশির মতো।

গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এম এ মোতালেবকে ‘জামায়াতের এমপি’ বলে সম্বোধন করে সাবেক এমপি আবু রেজা নদভী বলেন, ‘নির্বাচনের পর থেকে সাতকানিয়া-লোহাগড়ায় জামায়াতের তৎপরতা বেড়েছে। শিবির কয়েক হাজার মানুষ নিয়ে মিছিল করেছে। মনে হচ্ছে তারা এখান থেকে ইসলামি স্টেটের কাজ শুরু করেছে। তাহলে স্বতন্ত্র এমপি সাহেব সরকারের এমপি, নাকি জামায়াতের এমপি আমি জানি না।’

নদভীর দাবি, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকে সাতকানিয়া-লোহাগড়ায় নৌকা নেই। নৌকা নেই মানে আওয়ামী লীগ নেই। স্বতন্ত্র আছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, স্বতন্ত্রও নেই, জামায়াত আছে। এখন জামায়াতের এমন কোনো ক্যাডার নেই, যারা মাঠে নেই।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান সাবেক এমপি নদভী। আগামী উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতকে আলোচনায় আনতে একটি পক্ষ নতুন করে জামায়াত ইস্যু সামনে আনছে। চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর শাহজাহান চৌধুরীর অনুসারীদের প্রতিষ্ঠিত করাই এর মূল লক্ষ্য।

তাদের ভাষ্য, যেহেতু আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রার্থী দিচ্ছে না এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হতেও বাধা নেই। এই সুযোগে জামায়াতকে প্রতিষ্ঠিত করতে ওই গোষ্ঠী তৎপরতা চালাচ্ছে। যে চক্রটি জামায়াতের নেতা শামসুল ইসলামকে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ করেছে সেই চক্রটি ফের শাহজাহান চৌধুরীর অনুসারীদের প্রতিষ্ঠিত করতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিরের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনটি। বিভিন্ন সময় এ আসন থেকে এমপি হয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা। সর্বশেষ ২০০৮ সালে সারাদেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ের গণজোয়ার হলেও ব্যাতিক্রম ছিল এ আসনটি। এই আসনে এমপি হন জামায়াত নেতা শামসুল ইসলাম। এ পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালে জামায়াত ঘরানার আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভীকে দলে টেনে নিয়ে আসে আওয়ামী লীগ। তাদের সেই কৌশলের কারণে ‘ষোলো আনাই’ ফল দেয় নদভী। আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে আসে।

২০১৮ সালের নির্বাচনেও নদভী জয়ী হন। দুই মেয়াদে তিনি সেখানে একক আধিপত্য গড়ে তোলেন। তবে জামায়াত ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ কাটিয়ে উঠতে পারেননি নদভী। ফলে আওয়ামী লীগের মূলধারার সঙ্গে তার বিশাল বিরোধ এবং দূরত্ব তৈরি হয়। এই সুযোগে এমপি নদভী আওয়ামী লীগে জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করেছেন বলে স্থানীয় একাধিক নেতা দাবি করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ওই সময়ে নদভী আওয়ামী লীগ বিরোধীদের পৃষ্টপোষকতা দিয়েছেন। স্বজনপ্রীতি প্রদর্শন করে নিজের ভাইপোকে মাদার্শা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, জামায়াত নেতা মুমিনুল হক চৌধুরীর সন্তান রুহুল্লাহকে চরতী ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন বলেও অভিযোগ তোলেন আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর