ঢাকা, শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ
ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রামের ভূমিকা ছিল অনবদ্য। লালদিঘী ময়দানে ঐতিহাসিক ছয় দফার পক্ষে হয়েছিল প্রথম জনসভা। সেই ছয় দফা পরবর্তী সময়ে বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেটি প্রচার হয়েছিল চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে।

কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও চট্টগ্রামে নেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ। তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অস্থায়ীভাবে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। আজ ২৬ মার্চ এই অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে প্রথবারের মতো শ্রদ্ধা জানাবে চট্টগ্রামবাসী।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ না থাকার কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন ধরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। সে দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন প্রথমে অস্থায়ী ভিত্তিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিসৌধ করেছি। জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে কম সময়ের মধ্যে এই অস্থায়ী স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এখানে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করতে পারবে।

জেলা প্রশাসন জানায়, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নগরের ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স থেকে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানো জন্য শাটল বাস চলাচল করবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চারটি রিজার্ভ বাস যাতায়াত করবে। মুক্তিযোদ্ধারা এসব বাসে করে স্মৃতিসৌধে আসা যাওয়া করতে পারবেন। সারাদিন সর্বস্তরের মানুষের জন্য উম্মুক্ত থাকবে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে বন্দর সংযোগ সড়কের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ। জেলা প্রশাসনের আওতায় থাকা ৩০ একর জমি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে ৬২ শতাংশ জমির ওপর অস্থায়ী স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে এখানে আছে সাতটি স্তম্ভ। সবচেয়ে উঁচু স্তম্ভে দেওয়া হয়েছে একটি লোহার বেয়নেট। বেদীতে উঠতে সাত ইঞ্চি করে তৈরি করা হয়েছে সাতটি সিঁড়ি। স্মৃতিসৌধের সাতটি স্তম্ভ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি ধারাবাহিক পর্যায়কে নির্দেশ করে। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ এর শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এ সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসাবে বিবেচনা করে ঢাকার আদলে এ সৌধটি নির্মিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেদী থেকে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধের উচ্চতা ৩০ ফুট। শুধুমাত্র বেদীরই উচ্চতা চার ফুট। বেদীর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৪০ ফুট করে। ১৭ দিনে ১২ জন করে তিন শিফটে মোট ৩৬ জন শ্রমিক কাজ করে এ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছেন।

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর