ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সাত দশক ধরে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে খলিপাপট্টি
আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে গত সাত দশক ধরে পোশাক তৈরির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে চট্টগ্রামের দর্জিপাড়া খ্যাত খলিপাপট্টি। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদকে কেন্দ্র করে নিরবচ্ছিন্ন কর্মচাঞ্চল্য খলিপাপট্টিতে। এই দর্জিপাড়ার পাঁচ শতাধিক দোকানে ছয় হাজারের অধিক দর্জি এখন ঈদ পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত। এখানকার নামমাত্র মজুরিতে সেলাই করা তৈরি পোশাকগুলো দেশের অনেক অভিজাত শপিংমলে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

কী নেই এই দর্জিপাড়ায়। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ডিজাইন অনুযায়ী এখানকার দর্জিরা শিশুদের ফ্রক, থ্রি পিস, পাঞ্জাবিসহ প্রায় সকল ধরনের জামা তৈরিতে দক্ষ। এখানকার দর্জিদের তৈরি করা এসব জামা ছড়িয়ে পড়ছে সিলেট, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও দেশের উত্তরবঙ্গসহ প্রত্যন্ত উপজেলাগুলোতেও। চট্টগ্রামের অভিজাত মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে এসব পোশাক।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন খলিপাপট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘদিনের পুরনো অন্তত ৭০টি ভবনের প্রায় প্রতিটি ফ্লোরেই সেলাই মেশিনের নিরবচ্ছিন্ন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। একেকটি ফ্লোরে একাধিক সেলাই কক্ষ আছে। সেগুলোতে ১২-২৫ বছর বয়সী কিশোর তরুণরা চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন পোশাক তৈরি করছেন। নারীরা বোতাম লাগানো, চুমকিসহ অন্যান্য উপাদান যুক্ত করে দৃষ্টিনন্দন করে তুলছেন পোশাককে। কেউ কেউ আবার তৈরি পোশাক ভাঁজ করে প্যাকেজিংয়ে ব্যস্ত।

মো. মাসুদ নামে এক তরুণ জানান, তারা দিনরাত কাজ করলেও মজুরির পরিমাণ খুবই কম। ৩০-৫০ টাকায় শিশুদের পোশাক সেলাইয়ের মজুরি পান। অথচ এসব পোশাক সেলাইয়ের পর কারুকাজ শেষে অভিজাত শপিং মলগুলোতে ২-৩ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।

আল্পনা ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নুর মোহাম্মদ জানান, ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত এখানকার ব্যবসার সর্বোচ্চ জৌলুস ছিল। সে সময় তিনি তার বাবার সাথে ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। বর্তমানে বিদেশি পোশাকের জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে এখানকার ব্যবসার জৌলুস কমে আসছে। তবে এখনো এক শ্রেণির ক্রেতারা কম দামে পোশাক কিনতে খলিপাপট্টির তৈরি পোশাকের উপরই ভরসা রাখেন।

এই বাজারের ব্যবসায়ী ও বণিক সমিতির নেতারা জানান, বিভিন্ন দেশের নানা ডিজাইনের পোশাক বাজারে আসলে সেগুলো সংগ্রহ করে হুবহু নতুন করে তৈরি করতে পারেন এখানকার দর্জিরা। মূলত একারণে এই বাজারের খ্যাতি দেশজুড়ে। এক সময় খলিপাপট্টির কাপড় দিয়ে দেশের অনেক এলাকায় পুরো ঈদের পোশাকের জোগান দেওয়া হতো। বর্তমানে খুচরা বিক্রেতারা ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানির দিকে ঝুঁকছেন। ফলে এখানকার অর্ডারের পরিমাণ আগের চেয়ে কমে গেছে।

খলিপাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা মহামারি থেকে কয়েকবছর ধরে এখানকার ব্যবসা বাণিজ্যে এক প্রকার দুর্যোগ নেমে আসে। বেশিরভাগ দোকানির বেচাকেনা শূন্যে নেমে আসে। তবে এবার গত বছরের তুলনায় অর্ডারের পরিমাণ বেশি। রোজার অন্তত ১ মাস আগে থেকে এখনো পর্যন্ত প্রায় সব দর্জিরা পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন।’

সমিতির সভাপতি খন্দকার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ার পর থেকেই খলিপাপট্টির জন্ম। সেই হিসেবে এই বাজারের ইতিহাস ৭৭ বছরের পুরনো। বিভিন্ন সময়ে নানা উত্থান-পতনের পরও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এই দর্জিপাড়া। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের সহযোগিতা না পাওয়ায় নতুন করে এই বাজারের বিকাশ হচ্ছে না। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনেও কাজ করছেন অনেকে।’

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর