ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বোরো মৌসুমে উৎপাদন রেকর্ড সাড়ে ১২ লাখ টন চাল
চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চল
ইমরান এমি, চট্টগ্রাম:

চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে অনাবাদি জমিতে চাষাবাদের মাধ্যমে সব ধরণের ফসলে উৎপাদন বাড়ছে প্রতিবছরই। যার সর্বশেষ সংযোজন হলো সমাপ্ত বোরো মৌসুমে সাড়ে ১২ টন চালের উৎপাদন রেকর্ড। বছরের ব্যবধানে এই কৃষি অঞ্চলে ৭ হাজার ২৮৯ হেক্টর জমিতে নতুন করে বোরোর চাষাবাদ হওয়ায় উৎপাদনও বেড়েছে প্রায় ৩২ হাজার টন চালের। 

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার কৃষি উন্নয়ন এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বাড়াতে দেশব্যাপী নানামুখী পদক্ষেপের কারণে প্রতিবছর অনাবাদী জমিতে চাষাবাদ বাড়ছে। চাষযোগ্য জমি যাতে কোনভাবেই অনাবাদী রাখা না হয় সেজন্য কৃষকদের চাষাবাদে নানা উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর ধান বা সবজিসহ অনান্য ফসলের উৎপাদনে অবাদযোগ্য জমির পরিমান বাড়ছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চল দেশের উত্তর বা দক্ষিণবঙ্গের মতো কৃষি নির্ভর অঞ্চল না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই চট্টগ্রাম অঞ্চলে কৃষি উৎপাদন ও আবাদ দুইটাই বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। ধান, ডাল, ফল বা সবজী জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া অনাবাদি জমির পরিমান কমে আসা এবং নতুন নতুন হাইব্রীড জাতের ফসলের উৎপাদনের ফলে কৃুসির উৎপাদন প্রতিবছর তার নিজেকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া কৃষকদের নিয়মিত গাইড করা, চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের পরিচয় করে  দেওয়া, মাঠ ও ফসল নিয়মিত মনিটারিং করা, রোগ বালাইমুক্ত রাখতে কম ক্ষতিসম্পন্ন কীটনাশক ব্যবহারের কারণে উৎপাদন বাড়নো সম্ভব হয়েছে। 

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সমাপ্ত বোরো মৌসুমে চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলা (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষীপুর) অঞ্চলে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৩ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছে রেকর্ড ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮২টন চাল। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে আবাদ বেড়েছে ৭ হাজার ২৮৯ হেক্টর জমি এবং উৎপাদন বেড়েছে ৩১ হাজার ৯৯৪ টন চালের। সমাপ্ত অর্থবছরে এই অঞ্চলে মোট ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৩৩ হেক্টর হাইব্রীড ধানের আবাদ করে উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৫ টন চাল, উফশী জাতের ধান ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪৬ হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ২৬২ টন চাল এবং ১৭৪ হেক্টর স্থানীয় জাতের ধানের উৎপাদন হয়েছে ৩৬৫ টন চাল। হেক্টর প্রতি হাইব্রীডে গড় উৎপাদন ৪ দশমিক ৮৫ টন, উফশীতে ৩ দশমিক ৭৬ টন এবং স্থানীয় জাতের ধানের গড় উৎপাদন ২ দশমিক ১০ টন। 

জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে উফশী ও হাইব্রীড মিলে ৬৮ হাজার ৭৯৯ হেক্টর। এই জমিতে মোট চালের উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার ৪২২টন। বছরের ব্যবধানে আবাদ বেড়েছে ২ হাজার ৩৯৪ হেক্টর ও উৎপাদন বেড়েছে ৯ হাজার ২০৭ টন। এই জেলায় রেকর্ড ৪৬ হাজার ১৮৪ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের ধানের অঅবাদ হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় উফশী, হাইব্রীড ও স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ হয়েছে ৫৫ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ২৬৭টন। বছরের ব্যবধানে আবাদ বেড়েছে ৮১০ হেক্টর ও উৎপাদন বেড়েছে ৮ হাজার ১১৬ টন চাল।

নোয়াখালী জেলায় মোট আবাদ হয়েছে ৯৯ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমি এবং উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৭ টন। বছরের ব্যবধানে আবাদ বেড়েছে ২ হাজার ৭০৫ টন ও উৎপাদন বেড়েছে ৭ হাজার ২৪৮ টন। ফেনী জেলায় আবাদ হয়েছে ৩১ হাজার ২৭৭ হেক্টর জমি ও উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৯৭ টন। বছরের ব্যবধানে আবাদ বেড়েছে ৩১১ হেক্টর জমি ও উৎপাদন বেড়েছে ১ হাজার ৫৭ টন চাল। সর্বশেষ লক্ষীপুর জেলায় মোট আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমি ও উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৯ টন চাল। বছরের ব্যবধানে আবাদ বেড়েছে ১ হাজার ৬৯ হেক্টর ও উৎপাদন বেড়েছে ৬ হাজার ৪৫৬ টন চাল।

বিগত অর্থবছরগুলোর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বোরো মৌসুমে ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮২ টন চালের উৎপাদন দেখিয়েছে চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ লাখ ১৭ হাজার ৮৮৮টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১ লাখ ৭৭ হাজার টন,  ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০ লাখ ৮০ হাজার ২৮৫ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫৫০ টন চাল, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৫৬৯ টন চাল উৎপাদন হয়েছিলো। অর্থাৎ গত ১২ বছরে এই অঞ্চলে উৎপাদন বেড়েছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৩১৩ টন এবং আবাদ বেড়েছে ৬৫ হাজার ১৭৯ হেক্টর জমিতে।

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম অঞ্চল) অতিরিক্ত পরিচালক নাছির উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বোরো ধানের রেকর্ড প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। এই উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে অনাবাদী জামিতে নতুন করে চাষাবাদ বাড়ানো, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে। একফসলী জমিতে তিনফসলী রুপান্তরের মাধ্যমে এই উৎপাদন বাড়ছে। তাছাড়া বাজারে ধানের দাম বেশী থাকায় কৃষক ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আমরা চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে কোন অনাবাদী জমি যাতে না থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করছি।

বিডি প্রতিদিন/এএম



এই পাতার আরো খবর