ঢাকা, শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামে ডাকাত আতঙ্ক, আটক ৫
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম:

চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার ১৬ উপজেলায় বেশিরভাগ থানা পুলিশ শূন্য হওয়ায় ডাকাত আতংক বিরাজ করছে। গত কয়েকদিনে রাত হলেই আতংকে মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে। বাসাবাড়িতে ডাকাতির পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কৃষি খামার থেকে গরু লুটের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ধাওয়া দিয়ে পাঁচ ডাকাতকে আটক করে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে স্থানীয়রা।

জানা গেছে, গত কয়েকদিনে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র লুটের পর চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার থানা ভবন এবং বিভিন্ন এলাকার পুলিশ ফাঁড়িগুলো শুক্রবার পর্যন্তও স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এই সুযোগে হালিশহর, খুলশী, ষোলশহর, আগ্রাবাদ, চকবাজার, টেরিবাজার, নন্দনকানন, পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন স্থানে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে গত চারদিন ধরে অনেকে রাত জেগে বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় পাহারা দিচ্ছেন।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গত সোমবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে গাড়িতে থাকা ল্যাপটপসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায় একদল দুর্বৃত্ত। মঙ্গলবার রাতে হালিশহর ও খুলশি এলাকায় কয়েকটি সুপারশপ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের খবর পাওয়া যায়। একইদিন উত্তর পাহাড়তলীর লেকসিটি আবাসিক সংলগ্ন এলাকায় ডেইরি ফার্ম থেকে লুট করা হয় গরু।

বুধবার ভোর ৬টার দিকে প্রবর্তক মোড় মিনা বাজারের পাশের একটি বাড়ি দখলের চেষ্টা করা হয়। একইদিন মধ্যরাতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে ডাকাতির জন্য জড়ো হলে সেনা ও নৌবাহিনীর টহল টিমের সদস্যরা সেখানে যান। তারা যাওয়ার আগেই ডাকাতদল পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়ারা।

বৃহস্পতিবার ছুরি দেখিয়ে ছিনতাই করা হয় সিএনজি অটোরিকশা অটোরিকশা। ওইদিন মধ্যরাতে আন্দরকিল্লা রাজাপুকুর লেইন, চেরাগী পাহাড় শরীফ কলোনি, হেমসেন লেইন, দেওয়ানজি পুকুর পাড় এলাকায় অজ্ঞাত দুর্বত্তদের ছুটোছুটি দেখে আতংকিত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে কাজির দেউড়ি ও নন্দনকানন এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৫ ডাকাতকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন স্থানীয়রা।

কাজীর দেউড়ি এলাকার বাসিন্দা দেবব্রত রয় জানান, রাত দুইটার দিকে হঠাৎ মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় এলাকায় ডাকাত এসেছে। এসময় স্থানীয়রা একযোগে বাসা থেকে বের হয়ে ধাওয়া দিয়ে চারজনকে আটক করে সেনাবাহীর হাতে তুলে দেয়। রাত আড়াইটার দিকে নন্দন কানন এলাকা থেকেও একজনকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এদিকে ডাকাতির পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে আশংকাজনক হারে। অনেক ভুক্তভোগী সামাজিক মাধ্যমে তাদের ঘটনার কথা তুলে ধরছেন। পুলিশ ও থানাগুলো সক্রিয় না থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্তেও অনেকে অভিযোগ দিতে পারছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলায়ও ডাকাতি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। গত কয়েকদিনে মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডের বড় দারোগাহাট বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য বাসাবাড়িতে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিভিন্ন বাসা থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, বাসার আসবাবপত্রসহ ইচ্ছেমতোই লুট করে নিয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় খামার থেকে শতশত গরু ছাগল লুটেরও খবর পাওয়া গেছে।

বিভিন্ন উপজেলায় দুর্বৃত্তরা লুটপাট, চুরি-ডাকাতির পাশাপাশি হামলা চালিয়ে জায়গা জমি ও অন্যান্য সম্পত্তিও দখল করছে। বোয়ালখালী, রাউজান, পটিয়া, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, চন্দনাইশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগে দুবৃৃত্তরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কিছু এলাকায় মসজিদের মাইক থেকে সতর্ক থাকার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। অনেক এলাকায় স্থানীয়রা এক হয়ে রাত জেগে বাড়িঘর, দোকানপাট পাহারা দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে যে কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, হানাহানি এবং প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হলে সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এএম

 

 



এই পাতার আরো খবর