ঢাকা, বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

স্রোতে ভেসে চট্টগ্রামের ৩ উপজেলায় পাঁচজনের মৃত্যু
আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম
প্রতীকী ছবি

কেউ তলিয়ে যাচ্ছেন বন্যার আচমকা স্রোতে, কেউ ভেসে গেছেন ছেলেকে উদ্ধার করতে গিয়ে, কেউ আবার অন্যকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজের প্রাণ দিয়েছেন। এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া ও হাটহাজারী উপজেলায়। শনিবার (২৪ আগষ্ট) বিকেলে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিন উপজেলায় পাঁচজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট ইউনিয়নের মির্জারহাটের হালদার কিনারে বন্যায় আটকে পড়া মানুষজনকে উদ্ধার করতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সাঁতরে যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ ইমরান (২২)। যাওয়ার পথে আচমকা স্রোতে ভেসে যান টগবগে এই যুবক। গত দুইদিন খোঁজাখুজির পর শনিবার একই ইউনিয়নের মইঙ্গে পুকুর পাড় এলাকায় তার লাশ ভেসে উঠে। ইমরান স্থানীয় তাজুল ইসলামে সন্তান।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল মনসুর জানান, মাত্র ছয় মাস আগে ইমরানের বড় ভাই এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এখন অন্যদের উদ্ধার করতে গিয়ে তার জীবন শেষ হয়ে গেলো। তার পরিবারের এখন শোকের মাতম চলছে।

বন্যার পানি বাড়তে থাকায় গত বৃহস্পতিবার একই উপজেলার ভূজপুরের কবিরাপাড়া এলাকায় স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে পুত্র নাঈম আহমেদকে (১১) বাড়ি আনতে যান রজি আহমেদ (৫৫)। আসার পথে আচমকা স্রোতে দুজনই ভেসে যাচ্ছিলেন। এমন সময় কোনোমতে বিদ্যুতের একটি খুঁটির সাথে ছেলেকে আশ্রয় দিতে গিয়ে একপর্যায়ে তলিয়ে যান রজি। স্থানীয়রা নাঈমকে কিছুক্ষণ পর উদ্ধার করলেও রজির খোঁজ পাননি। শুক্রবার রাতে ওই এলাকায় তার লাশ ভেসে উঠে।

শুক্রবার বন্যার পানিতে একই উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের শান্তিরহাট বাজারের পূর্ব পাশে তিন শিশু সড়ক পার হওয়ার সময় পানির স্রোতে ভেসে যেতে থাকে। এসময় স্থানীয়রা দুইজনকে উদ্ধার করলেও স্থানীয় জামাল উদ্দিনের পুত্র শাহাদাত হোসেন সামি (১০) স্রোতে তলিয়ে যায়। পরে শিশুটির লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, বন্যার পানিতে এক শিশুসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পানি কমার আগে প্রকৃত হতাহতের খবর পাওয়া মুশকিল। এখন দুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চলছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ফাহমুন নবী জানিয়েছেন, বন্যায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ৫০ হাজার পরিবারের আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির তিনজন ছাড়াও রাঙ্গুনিয়ার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নে পানিতে তলিয়ে মো. রনি (১৭) ও হাটহাজারীতে বন্যার পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জিয়াউর রহমান সাকিব (২২) নামে দুই তরুণের মৃত্যু হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার জানান, মিরসরাই উপজেলায় ৫০টি এবং ফটিকছড়িতে ১০টি উদ্ধারকারী নৌযান কার্যক্রম চালাচ্ছে। উদ্ধার কার্যক্রমে সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা অংশ নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫৫ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১৯ লাখ ৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর