জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গত বছর ‘স্বাধীনতা’ পদকপ্রাপ্ত নৃত্যগুরু বজলার রহমান বাদলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুকে ব্যাথা অনুভব করলে শুক্রবার গভীর রাত পৌনে ২টার দিকে তাকে হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়। তবে সেখানে তাকে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ২০৭ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা প্রাপ্ত প্রবীণ এই ব্যক্তির জন্য একটি বেডেরও ব্যবস্থা হয়নি। মেঝেতেই বিছানা পেতে শুয়ে ছিলেন তিনি। মাথার সামনে চলছিল ছোট একটা বৈদ্যুতিক পাখা। নৃত্যগুরুর মাথার খুব কাছেই ছিল অন্য রোগীর স্বজনের এক জোড়া স্যান্ডেল। একটি স্যান্ডেলের অর্ধেকটা ছিল বিছানার ওপর। আর তার বালিশ ঘেঁষে ছিল আরেক রোগীর দুই পা।
তবে খবর পেয়ে দুপুরে হাসপাতালে তাকে দেখতে যান নবনির্বাচিত মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এরপরই রাষ্ট্রীয় পদক পাওয়া এই গুণীর জন্য শয্যার ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালে নৃত্যগুরুর মেয়ে নাজনিন আরা জানান, নগরীর শিরোইলে তার বাসায় থাকেন বজলার রহমান বাদল। প্রায় এক মাস ধরেই তিনি অসুস্থ। হৃদরোগ ছাড়াও আছে উচ্চ রক্তচাপ। এখন পায়ে-হাতেও তিনি ব্যথা অনুভব করেন। পুরো শরীর ফুলে গেছে। শুক্রবার রাত ১টার দিকে তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে চিকিৎসক তাকে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে দেন। কিন্তু কোনো বেড না পাওয়ায় তাকে মেঝেতেই রাখা হয়েছে।
নাজনিন আরা বলেন, ‘রাতে আমরা পরিচয় দিয়েছিলাম। নার্সরা বললেন, বেড খালি নেই। তাই তাদেরও কিছু করার নেই। বেড ফাঁকা না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই মেঝেতে থাকতে হবে। তাই আমরা টাকা লাগলেও কেবিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ডাক্তার বললেন, এই ধরনের রোগীদের কেবিনে রাখার ব্যবস্থা নেই। কী করার! এখানেই আছি।
শনিবার দুপুর পৌনে ২টায় রামেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা. রইস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ওনার তেমন কোনো সমস্যা পাইনি। তার হার্ট ঠিকই আছে। তারপরেও আমরা দু’একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিয়েছি। রিপোর্ট পেলে তা দেখে আমরা তাকে ছেড়ে দেব।’ মেঝেতে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. রইস উদ্দিন বলেন, ‘আমি বেডের কথা ওয়ার্ডে বলে দিয়েছি। ব্যবস্থা হচ্ছে।’
বিডি প্রতিদিন/১৮ আগষ্ট ২০১৮/হিমেল