ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মডার্নার টিকা জালিয়াতি; ৩ হাজার ডোজে ব্যবসা ১৫ লাখ!
সাখাওয়াত কাওসার
প্রতীকী ছবি

‘দরিদ্র পারিবারিক সেবা সংস্থা’ ক্লিনিকেই কমপক্ষে ৩ হাজার ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হয়। প্রতিজনের কাছ থেকে নেওয়া হয় ন্যূনতম ৫০০ টাকা করে। ওই ক্লিনিক থেকে জব্দ করা মডার্নার ২০টি বক্স এবং দুটি আলাদা ভায়াল থেকেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

কারণ প্রতিটি ভায়াল থেকে ১৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়। ক্লিনিক মালিক পল্লী চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভয়ংকর এই অপরাধের সঙ্গে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। এরা শুধু দক্ষিণখান নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টিকা জালিয়াতি করেছে বলে ধারণা তাদের। ১৮ আগস্ট রাতে দক্ষিণখানে  একটি ফার্মেসি থেকে বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার নামে ওই প্যারামেডিককে মডার্নার টিকার দুটি ভায়ালসহ গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে মডার্নার টিকার দুটি খালি বাক্সও উদ্ধার করা হয়। বিজয়কে দুদিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকার আদালতে নেওয়া হলে মহানগর হাকিম আশেক ইমাম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কভিড-১৯ টিকা দেশে সরকারিভাবে এনে দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারিভাবে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখন পর্যন্ত অনেক বিষয় তদন্তে ওঠে এসেছে। এর মধ্যে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে পল্লী চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ এই টিকা বিক্রি করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি তার নিজস্ব ফার্মেসিতে টিকা এনে রেখেছেন। যেখানে কোনো ফ্রিজ নেই। কারণ একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় করোনা টিকা রাখার নিয়ম থাকলেও তিনি তা করেননি। আবার এই টিকা ফ্রিজ থেকে বের করার পর যাকে বা যাদের উদ্দেশ করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে ওই দিনের মধ্যেই সেই পরিমাণ ডোজ দিয়ে দিতে হবে। তা নাহলে টিকার কার্যকারিতা থাকে না। এ ছাড়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে টিকার সব কর্মকান্ড শেষ করতে হবে সততার সঙ্গে। কিন্তু তাও করেননি বিজয়। 

বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে এলাকাবাসীর কাছে বিজয় সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কেউ কেউ তাকে প্রতারক যেমন বলেছেন, তেমনি অনেকে ‘ভালো মানুষের’ তকমাও দিয়েছেন। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, বিজয় সরকারের গণটিকা কর্মসূচির কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ওই কর্মসূচির দায়িত্ব পালনের সময় তার ক্লিনিকে আনা হয়েছে টিকাগুলো। এসব টিকা উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনার টিকা নিয়ে এ ধরনের প্রতারণার কর্মকান্ড অত্যন্ত দুঃখজনক। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই বিজয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ‘দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থা’ ক্লিনিকের আশপাশে মানুষের জটলা দেখা যায়। সেখানে এলাকাবাসীর অভিযোগ শুনছিল একদল পুলিশ। একজন বলছিলেন, ‘টাকা ছাড়াই সরকার আমগো টিকা দিচ্ছে। সেই টিকা হেই ব্যাডা টাকা নিয়ে বিক্রি করছে। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।’ আরেকজন বলছিলেন, ‘হেয় তো পল্লী চিকিৎসক, বিপদে আমাদের সেবা দিত। ভালো মানুষ বলেই জানতাম তারে। সে আমগো সঙ্গে এত বড় বাটপাড়ি করতে পারল।’ তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, এটা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ। এরা করোনা টিকা নিয়ে আরও অনেক দুর্নীতি করতে পারে। তাদের খুঁজে বের করতে পারলে হয়তো সাপও বের হয়ে আসতে পারে। এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা বাইরে বিক্রির সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম।

২২ আগস্ট রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আইনি প্রক্রিয়া। যে লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করছে। আর স্বাস্থ্য অধিদফতরও এ ঘটনায় আলাদা তদন্ত করছে। কেউ এ ঘটনায় জড়িত কি না- সে বিষয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর