ঢাকা, রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বরেন্দ্র অঞ্চলে পাতকুয়ার সুফল পাচ্ছেন ২৩ হাজার সুবিধাভোগী
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষিরা। হাতকল আসার আগে এ অঞ্চলের কৃষি ও সুপেয় পানির নির্ভরযোগ্য আধার ছিল ‘পাতকুয়া’। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাবমার্সিবল পাম্প, গভীর নলকূপসহ নানা প্রযুক্তির কাছে হারিয়ে যায় পাতকুয়া। তবে দীর্ঘদিন পর আবারও কৃষি কাজসহ অন্যান্য কাজের জন্য পাতকুয়ার প্রয়োজন অনুভব করছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) প্রকৌশলীরা। এতে করে বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচকাজসহ বহুমুখী ব্যবহার শুরু হয় পাতকুয়ার।

পাতকুয়া হল ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরের নিচ পর্যন্ত গোলাকার আকৃতিতে মাটি খনন করে চারপাশ থেকে চুয়ানো পানি ধরে রাখার আধার। এসব পানি এলএলপির মাধ্যমে প্রথমে একটি ট্যাংকে তোলা হয়। তারপর সৌর শক্তিকে ব্যবহার করে যন্ত্রের মাধ্যমে সেই পানি যাচ্ছে ঘর-গৃহস্থালি ও কৃষিজমির সেচকাজে। ফলে পাতকুয়ার চারপাশে মাটিতে এখন নির্বিঘ্নে চাষাবাদ করা হচ্ছে নানা রকম ফসল।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) অফিস সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী অঞ্চলের পবা উপজেলাসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা, নাচোল, গোমস্তপুর ও নওগাঁ জেলার সাপাহার, পোরশা, ধামাইরহাট, পত্নীতলা, নিয়ামতপুর এবং মহাদেবপুর- এই ৯ উপজেলায় ৫৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে সৌরশক্তি চালিত ৪২০টি পাতকুয়া নির্মাণ করা হয়। এসব পাতকুয়া মাধ্যমে ১৩৭৮ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। যার মাধ্যমে বছরে ২৫ কোটি টাকার স্বল্প সেচের ফসলের আবাদ সম্ভব হয়েছে। 

কৃষক ও প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা বলছেন, পাতকুয়াগুলোর ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনমান পাল্টে গেছে। মহাদেবপুরের উপকারভোগী কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, গত মৌসুমে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে তিনি সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে ফসলে সেচ দেয়ায় পানির সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, লাউ, মরিচ চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, টমেটো, আলু, আবাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে। সম্পূর্ণ বিনা খরচে অনেক চাষিরা সেচ পাওয়ায় বেশ খুশি তারা।

পবা উপজেলার কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, পাতকুয়াগুলো সূর্যশক্তিতে চলার কারণে বিদ্যুৎ বা ডিজেল ব্যবহার প্রয়োজন না হওয়ায় একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকছে, অন্যদিকে কোনো খরচও নেই। পোরশা উপজেলার মাজেদুল ইসলাম জানান, গত রবি মৌসুমে কৃষকদের পাশাপাশি তিনি নিজেও ৫ বিঘা জমিতে সবজির আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। সেই সঙ্গে অন্যরাও এর মাধ্যমে সবজি চাষে লাভবান হয়েছেন।

প্রকল্পের পরিচালক বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রশীদ বলেন, পাতকুয়া খননের মাধ্যমে বরেন্দ্র এলাকায় স্বল্পসেচে ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় পাতকুয়া নির্মাণ করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বিএমডিএ। গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে শুরু হয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এর কার্যকারিতা অব্যাহত আছে। আর এসব পাতকুয়ায় মাধ্যমে সুবিধাভোগ করছেন প্রায় ২৩ হাজার ১০২ জন সুবিধাভোগী। পাতকুয়ার মাধ্যমে স্বল্প সেচের বিভিন্ন ফসল চাষে বিনামূল্যে সেচ সুবিধা পাওয়ায় উপকৃত হচ্ছে এসব উপজেলার হাজারও প্রান্তিক কৃষক।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান বলেন, পাতকুয়ার সুবিধা হল এখানে কোনো কৃষকের কাছ থেকে পানি খরচ নেওয়া হয় না। শুষ্ক মৌসুমে এটা খুবই কার্যকর। কৃষকবান্ধব সরকার কৃষকের জন্য নিত্যনতুন সেচের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন। পাতকুয়ার ব্যবহার নিয়ে বর্তমানে এলাকার কৃষকদের মাঝে বেশ উৎফুল্ল বিরাজ করছে। এলাকায় এগুলোর যথোপযুক্ত ব্যবহার হবে বলেও আমরা যথেষ্ট আশাবাদী।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর



এই পাতার আরো খবর