ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পদোন্নতি পেয়ে বিদায় নিলেন ঢাকা জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
মোহাম্মদ মমিনুর রহমান

সততা, সাহসিকতা, দক্ষতা, মানবিকতা ও উদ্ভাবনী মনোভাবের প্রতিমূর্তি ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আজ তার নতুন কর্মস্থল অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে যোগদান করেছেন।

মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ১৮৫তম জেলা প্রশাসক হিসেবে ২০২২ সালে ৮ ডিসেম্বরে ঢাকা জেলায় যোগদান করেছিলেন। ইতোপূর্বে তিনি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। জনবান্ধব মোহাম্মদ মমিনুর রহমান জেলা প্রশাসক হিসেবে ঢাকায় যোগদান করে ঢাকা জেলার জটিল ও বৃহৎ রাজস্ব প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। 

ঢাকা জেলার সকল স্তরের সেবা প্রত্যাশীদের চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন। ঢাকা মহানগরে ঘটে যাওয়া সিদ্দিকবাজার বিস্ফোরণ, বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ড ও নিউমার্কেট অগ্নিকাণ্ডে সময়োপযোগী ভূমিকা পালন করে সার্বিক ব্যবস্থাপনাসহ ক্ষতিগ্রস্তদের বিপুল আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ অধীনস্থ অন্যান্য অফিস আধুনিকায়ন, জেলা প্রশাসনের শূন্য পদে নিয়োগ প্রদান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়ন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্তরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ঢাকা জেলায় যোগদানের পরপরই অন্যান্য সকল বিষয়ের মত ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাপনা খাতেও তার উদ্যমী ভূমিকা রেখেছেন। 

গত ৮ মাসে ঢাকা জেলায় ৫৭.৫৯ একর খাসজমি উদ্ধার করা হয়েছে যার বাজারমূল্য প্রায় ২,০০০ কোটি টাকা। ঢাকা শহরের মিরপুর, পুরানা পল্টন, নবাবপুর রোড, তোপখানা রোড, ডুমনীসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারের মূল্যবান সম্পত্তি হতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। গত ৮ মাসে প্রায় ৪.৫২ একর অবৈধ দখলে থাকা স্থাপনাসহ অর্পিত সম্পত্তি দখল মুক্ত করেন যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। উদ্ধারকৃত এ সকল সম্পত্তি জনকল্যাণে ব্যবহার নিশ্চিতকরণের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

মমিনুর রহমানের দৃঢ় নেতৃত্বে নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপা ইউনিয়নের নয়নাভিরাম জমিদার বাড়ি রজনিকেতন অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে যা সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা হয়েছে। পুরানা পল্টনস্থ সরকারি খাস ও অর্পিত সম্পত্তির উপর নির্মাণাধীন একটি ১৮ তলা ভবন উদ্ধার করে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।

পল্টন এলাকায় একাধিক ভবনসহ প্রায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ৩০.৫ শতক সরকারি খাস জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করে জেলা প্রশাসনের নিজস্ব বাজেটে সহকারী কমিশনার (ভূমি), রমনা এর কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। উরু জায়গায় 'ঢাকা কালেক্টরেট অফিসার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সাবেক চিত্রনায়িকা সুজাতা আজিমকে পুরান ঢাকার ওয়ারীতে থাকার জন্য জমিসহ একটি বাড়ি লিজ দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। এছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের সামাজিক সংগঠন জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৫ শতক অর্পিত সম্পত্তি ইজারা দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। বরান নিয়েও সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছেন ঢাকার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

"ভালো কাজের হোটেল' নামক সেচ্ছাসেবী সংগঠনকে রাজধানীর বনগ্রামে বর্গফুটের একটি বাড়ি বরান নিয়েও সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছেন ঢাকার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

জেলা প্রশাসক, ঢাকার নির্দেশনায় অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করে ৯২ বি.সি.সি রোডস্থ হোল্ডিংয়ের ১০ কোটি টাকা মূল্যের অর্পিত সম্পত্তি বীরবিক্রম শহীদ মহিবুল্লাহ'র পরিবারকে লিজ প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা জেলার সাভার, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, দোহার উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভূমিহীন গৃহহীন মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত ০৮ মাসে ৫৭০টি ঘর নির্মাণ। করে গৃহহীনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।।

নাগরিক পর্যায়ে ভূমি সেবা প্রদানে ঢাকা জেলা সারা দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। প্রতি মাসে প্রায় ৩০,০০০ নামজারী মামলা স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। ঢাকা জেলার গড় নামজারী নিষ্পত্তি দিন মাত্র ০৯ দিন।

একটি আধুনিক, সময়োপযোগী ও ডিজিটাইজড অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের নিমিত্ত জেলা প্রশাসক, ঢাকা'র নির্দেশনায় অর্পিত সম্পত্তি শাখার জন্য অনলাইনভিত্তিক এপস ডেভেলপ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে অর্পিত সম্পত্তির লিজ নবায়ন ও লিজমানি আদায়, অর্পিত সম্পত্তির ইজারা প্রদান, অর্পিত সম্পত্তি চিহ্নিত করণ ইত্যাদি কাজ অত্যন্ত সহজে স্বল্পসময়ে নির্ভুলভাবে করা হচ্ছে। গত ৮ মাসে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ১১১৫টি মামলায় ৮৯২,১১,৮৩,১৮৩/৫৭ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা প্রতিষ্ঠায় Automated Compensation Payment System (ACPS) কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণ শাখার মামলা দ্রুততার সাথে নিষ্পত্তি ও দুর্নীতিমুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা জেলার বিভিন্ন ভূমি অফিসে দালাল ও ওমেদার মুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা জেলার বিভিন্ন ভূমি অফিস থেকে ২৩ জন দালালকে বিভিন মেয়াদে জেল ও জরিমানা দণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও জাল দলিল ও খতিয়ান প্রস্তুতকারী ৩টি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করে ৫ জন আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঢাকা জেলায় এনজিওসমূহের সঙ্গে জেলা প্রশাসন সমন্বয় সাধনের জন্য ও এনজিও সংক্রান্ত কার্যক্রমের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য এনজিও পোর্টাল চালু করা হয়েছে।

এনজিও সংস্থাগুলোকে নিয়ে ৩০০ জন সদস্যের ইমার্জেন্সী রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে ঢাকা জেলায় নিবন্ধনকৃত লাইসেন্স প্রদান ও ব্যবস্থাপনা সহজ করার জন্য সুরক্ষা প্রযুক্তির ১৮ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত “স্মার্ট ফায়ার আমর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম" এপস চালু করা হয়েছে। স্মার্ট জেলা গড়ার লক্ষ্যে হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট সংক্রান্ত হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (H&RMS) এপস চালু করেছে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে পারসোনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্টের (PIMS) আদলে Biometric Attendance Management System চালু করতে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকার নিরাপত্তা বিধানে সার্বক্ষণিক ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগ করা হয়েছে। নবনিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারিদের শারিরীক প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত মিডিয়া সেল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বর্ণবাজার অধিকারে প্রসারী ও কর্মচারীদের জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৫৯০ জনকে মোট ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা সহায়তা করা হয়েছে। সিদ্দিকবাজার বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

চট্টগ্রামে করোনাকালে মোহাম্মদ মমিনুর রহমান নিরলসভাবে কাজ করে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন। মমিনুর রহমান তার সাহসিকতা ও মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রের সর্বস্তরের মানুষের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন।

 



এই পাতার আরো খবর