ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

রাজধানীতে কিউলেক্স মশায় অতিষ্ঠ মানুষ
চার মাসে মশা বেড়েছে দ্বিগুণ, তৎপরতা নেই সিটি করপোরেশনের
নিজস্ব প্রতিবেদক

মৌসুমের শুরুতেই নগরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিউলেক্স মশা। দুই সিটিজুড়েই বেড়েছে উৎপাত। বিশেষ করে জলাধারকেন্দ্রিক এলাকাগুলোয় যেন মশারই রাজত্ব। দিন-রাত সব সময় মশা আর মশা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি, কয়েল, ইলেকট্রিক ব্যাট,  স্প্রেসহ নানা কৌশল অবলম্বন করেও রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। অফিস, বাসাবাড়ি বা দোকান, কোথাও স্বস্তি নেই। এক কথায় মশায় অতিষ্ঠ মানুষ।

গবেষণায় দেখা গেছে, নভেম্বরের চেয়ে মার্চে মশা বেড়েছে দ্বিগুণ। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের কোনো তৎপরতাই নেই।

ভুক্তভোগীরা জানান, মশার উপদ্রবে তারা অতিষ্ঠ। কিউলেক্স মশার ভয়াবহ উপদ্রবের সময়েও সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটাচ্ছে না। সকালে ড্রেনগুলোয় লার্ভা নিধনের ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও তা দেখা যায় না। বিকালে ফগিং করার নিয়ম থাকলেও মশক কর্মীদের দেখা মিলছে না। অভিজাত ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মশক কর্মীদের তৎপরতা থাকলেও অন্য জায়গায় তাদের দেখা মিলছে না। তারা আরও জানান, রাত-দিন সব সময়ই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ থাকতে হচ্ছে। কয়েল জ্বালিয়ে ও মশারি টাঙিয়েও নিস্তার মিলছে না। একটু বেখেয়াল হলেই মশার হামলার শিকার হচ্ছে শিশুরা। তাদের শরীরে গোটা গোটা হয়ে যাচ্ছে। রমজানে স্কুল খোলা থাকায় শিশুরা স্কুলে গিয়েও মশার কামড় খাচ্ছে। মেয়ররা মশা দমনের নানা গল্প শোনালেও বাস্তবে তার কোনো প্রমাণ মিলছে না। রামপুরা এলাকার বাসিন্দা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, বিগত দুই থেকে তিন মাসে রামপুরা এলাকায় মশক কর্মীদের দেখা মেলেনি। সকাল ও বিকালে দুই ধরনের ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও এক ধরনের ওষধুও সিটি করপোরেশন কর্মীরা ছিটাচ্ছেন না। অথচ হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ বছরে মোটা অঙ্কের স্বাস্থ্য কর আদায় করছে। মশা নিয়ন্ত্রণের নামে বরাদ্দও করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না।

মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদের বলেন, কিউলেক্স মশা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। চায়ের দোকানে বসে স্বস্তিতে এক কাপ চা খাওয়ার মতো ফুরসত নেই। নামাজ, ইফতার, অফিসে কাজের সময় কিউলেক্স মশার উপদ্রবে নাকাল হতে হচ্ছে। কিন্তু এই এলাকায় মশক কর্মীদের কোনো পদচারণ লক্ষ্য করা যায় না।  ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকায় কিউলেক্স মশার প্রকোপ ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। এর মধ্যে উত্তর সিটিতে বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ঢাকার দুই সিটি এবং সাভার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত এক ধারাবাহিক জরিপে দেখা গেছে, গত নভেম্বর মাসের তুলনায় চলতি মার্চ মাসে কিউলেক্স মশার পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি। এ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১২৩ প্রজাতির মশার খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই ১৪টি প্রজাতির মশা পাওয়া যায়। এ মশা সাধারণত পচা পানিতে হয়। মশা যে শুধু ঢাকায় বাড়ছে তা নয়, সারা দেশে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেড়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ঝড়বৃষ্টি না হয়, কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়তে থাকবে। এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, মশার ঘনত্ব জানতে মূলত এ গবেষণা। এর আগে পূর্বাভাসে আমরা বলেছিলাম মার্চে চরমে পৌঁছাতে পারে। সেই পূর্বাভাস সত্যি হয়েছে। এখন গড়ে প্রতি ফাঁদে মিলছে ৪২০টি মশা। সবচেয়ে বেশি মশা পাওয়া যাচ্ছে উত্তরা ও দক্ষিণখান এলাকায়। গড়ে ৫০০ মশা ধরা পড়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা মশা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

 তবে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি এলাকা থেকে কিছু অভিযোগ এসেছে, সামগ্রিকভাবে কোনো অভিযোগ আসেনি। কিউলেক্স মশার মৌসুমও শেষের দিকে রয়েছে। আশা করি মশা নিয়ন্ত্রণে রেখে মৌসুম শেষ করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, খাল, নালা, নর্দমাসহ জলাশয়গুলো সিটি করপোরেশন পরিষ্কার করেছে। কিন্তু নাগরিকরা আবার ময়লা ফেলে অপরিষ্কার করেছে। ফলে সেখান থেকে কিছু মশার প্রজনন হয়েছে। মানুষ সচেতন থাকলে এরকম হতো না। তারপরও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, আমাদের মশক কর্মীদের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রেখেছি। কর্মীদের অনলাইনেও মনিটরিং করা হচ্ছে। সুতরাং কর্মীরা কাজে গাফিলতি করার সুযোগ নেই। আর যারা এসব অভিযোগ করছেন তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরীকে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল



এই পাতার আরো খবর