ঢাকা, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

দুর্ভোগ নিরসন না হলে উত্তর সিটি ঘেরাও করবে দক্ষিণ-উত্তরখানবাসী
রাস্তায় গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসব
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিকল্প সড়ক না রেখে একসঙ্গে সকল রাস্তার উন্নয়ন কাজ শুরু করায় সম্পূর্ণরুপে যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন দক্ষিণ খান ও উত্তরখানের বাসিন্দারা। সড়ক খুড়ে দীর্ঘ দিন ফেলে রাখায় বৃষ্টি ও ড্রেনের পানিতে ভোগান্তির চরম সীমায় এই দুই এলাকার ৭টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। কোনো রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়ার রাস্তা অবশিষ্ট নেই। রাস্তার মধ্যে গর্ভবতী মহিলাদের সন্তান প্রসবের মত মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে। এই এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এখানে যে কয়েকটি ক্লিনিক রয়েছে সেখানে ডাক্তার আসতে না পারায় প্রায় বন্ধ চিকিৎসা সেবা।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর দক্ষিণ খান বাজারে দক্ষিণখান ও উত্তরখানবাসীর আয়োজনে রাস্তার উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করা ও দুর্ভোগ নিরসনে মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। এতে এলাকাবাসী তাদের বক্তব্যে এসব অভিযোগ ও ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন।

'অসুস্থ রোগী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা চাই', 'ড্রেনের পানিতে সাঁতার কাটতে চাই না', 'এই ভোগান্তির শেষ কবে'- এমন ব্যানার ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন হাজারো মানুষ। 

মানববন্ধনে দক্ষিণখান উত্তরখান সচেতন নাগরিক কমিটির আহবায়ক ইয়াছিন রানা বলেন, ২০১৬ সালে এই এলাকা ঢাকা উত্তর সিটির আওতায় আসার পর থেকে পরিপূর্ণরুপে উন্নয়ন কাজ বন্ধ ছিল। সিটি নির্বাচনের ছয় বছর পরে এসেও এখানের চিত্র বদলায়নি। বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকা তলিয়ে যায়, হাটার মত অবস্থা থাকে না। সড়ক খনন নীতিমালা না মেনে সব রাস্তা এক সাথে কাটায় স্বাভাবিকভাবে মানুষ যাতায়াত করতে পারে না। অফিস করতে উত্তরা বা বিমানবন্দর যেতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়, কয়েক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে পাড়ি দিতে হয়।  ১০ টাকার অটো ভাড়া ৫০ টাকা নেয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক এলাকায় কোনো গাড়িই চলাচলের সুযোগ নেই। বৃষ্টি হলেই রিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, গত বুধবার ৯ অক্টোবর দক্ষিণখান বাজারে ঈদ গাহ মাঠের সামনে একজন গর্ভবতী হেঁটে ক্লিনিকে যাবার সময় রাস্তায় সন্তান প্রসব করেছেন। রোগীদের হাসপাতালে নিতে এম্বুলেন্স এই এলাকায় ঢোকার মত রাস্তা নেই।

ইয়াছিন রানা বলেন, এই এলাকায় সিটি করপোরেশনের কেউ পরিদর্শনেও আসেন না। তারা উত্তরা, গুলশান, মিরপুরেই শুধু পরিদর্শন করেন। তাদের কাছে জানতে চাই,  উত্তরা, গুলশানের বাসিন্দারা এ গ্রেডের নাগরিক আর দক্ষিণখান উত্তরখানের বাসিন্দারা সি গ্রেডের নাগরিক হিসেবে কেনো তারা মূল্যায়ন করছেন তা স্পষ্ট করতে হবে।

মানববন্ধনে দক্ষিণখান উত্তরখানের জনগণ পক্ষে ৭টি দাবি তুলে ধরেন দক্ষিণখান উত্তরখান সচেতন নাগরিক কমিটির আহবায়ক ইয়াছিন রানা। দাবিগুলো হল: ১. কাজের গতি যেকোন উপায়ে দ্রুত বৃদ্ধি করা। ২. জরুরী চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তাগুলো অগ্রধিকার ভিত্তিতে লোকবল বৃদ্ধি করে চলাচল উপযোগী করা। ৩. যে সকল রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে সেগুলোর একটি টাইম সিডিউল দিয়ে দিতে হবে, কত দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে এটা জানিয়ে প্রত্যেক রাস্তায় তা লিখে টানিয়ে দিতে হবে। ৪. যে রাস্তার কাজ যে ঠিকাদার পেয়েছে সে ঠিকাদারের প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঠিকানা যোগাযোগের নাম্বার জানিয়ে দিতে হবে। ৫. রাস্তার কাজের মান নিয়ে সাধারণ জনগণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে এই বিষয়ে সঠিক তদারকি করতে হবে। ৬. নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ চলতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার কাজ ভালো মানের উপকরণ দিয়ে করার আদেশ জারি করতে হবে। ৭. কোনো ঠিকাদার যথাযথভাবে কাজ না করলে কিংবা অনুপস্থিত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

মানববন্ধনে দক্ষিণ খান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খলিল মোল্লা বলেন, আমাদের দুর্ভোগ ভোগান্তি নিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের কোনো মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হয় না। না হয় ভোগান্তি নিরসন হচ্ছে না কেনো। সকল রাস্তা একই সময়ে কেটে ফেলা কোনো নীতিমালার মধ্যে পড়ে তা জানতে চান তিনি।

আনোয়ার হোসেন জমিদার বলেন, পদ্মা নদীতে যদি সেতু করা যেতে পারে তাহলে দক্ষিণখান ও উত্তরখানের রাস্তা করতে এতো দেরি হবে কেনো।  ড্রেনের পাইপ বসানোর পর কিউরিংয়ের জন্য ২৯ দিন রাখার কথা থাকলেও ৪, ৫ মাস এভাবেই ফেলে রাখা কোন নিয়মের মধ্যে পড়ে তা জানতে চান তিনি।  

নাহিদ ইসলাম বলেন, আমার বাবা ব্রেন স্ট্রোক করার পর কোন অ্যাম্বুলেন্স পাইনি। মোটরসাইকেলে দুই জনের মাঝে বসিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়েছিলাম কিন্তু বাঁচাতে পারিনি।

মুক্তাদির মুন বলেন, আমার বাবা অসুস্থ হবার পর আমরা দুই ভাই কোলে করে কিছু রাস্তা রিকশায় করে কসাই বাড়ি রেললাইন পার হই। এরপর উত্তরায় বাংলাদেশ মেডিকেলে নেয়ার পথে বাবা মারা যান। 

মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন দারুল উলুম মাদ্রাসা মসজিদের খতিব গিয়াস উদ্দিন মাদানী, ফয়সাল  হোসেন, বারিকুল ইসলাম শোভন, সাজ্জাত হোসেন, এহসানুল হক শোভন, মোক্তদির মুন, মামুন হোসেন জমিদার, ডা. জাকিরুল ইসলাম, জয়নাল আবেদিন অনিক, সাইদুল ইসলাম সুমন, মুফতি খায়রুল হোসেন, মুফতি মাসুদুর রহমান, সালাউদ্দিন, দক্ষিণ খান ও উত্তরখানের ব্যবসায়ীবৃন্দ।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর