ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

‘লিঙ্গ সমতায় শুধু আইন নয়, প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে’ সেমিনারে বক্তারা
অনলাইন ডেস্ক

‘গত এক যুগ ধরে নারীদের অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও নারীরা এখনও পিছিয়ে আছে। এখনও নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমান অধিকার পায়নি। আজকে নারী-পুরুষের সমতার কথা বলা হলেও এখনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তবে এই বৈষম্য দূরীকরণে শুধু আইন নয়, প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া আমাদের মনোজগতেরও পরিবর্তন করতে হবে।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটর পদ্মা লাইফ টাওয়ারে বিবার্তা ২৪ ডটনেট ও জাগরণ আইপি টিভির কার্যালয়ে ‘স্বাধীনতা পায় পূর্ণতা, নিশ্চিত হলে লিঙ্গ-সমতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে বিবার্তা ২৪ ডটনেট ও জাগরণ টিভি। 

বৈঠকে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যত ঘটনা আছে সবকিছুর উপরে হল রাজনীতি। যদি রাজনীতির সিদ্ধান্ত সঠিক না হয়, তাহলে দেশের উন্নতি কখনও সম্ভব না। বাংলাদেশের সংবিধানে বঙ্গবন্ধু নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। আজকে তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় না থাকতেন বা পুরুষ শাসনে শাসিত হতো তাহলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন, কমিউনিটি ইউনিট এবং আমাদের দেশে যারা তৃতীয় লিঙ্গের আছেন তাদের অগ্রগতি আজকের এসময়ে সম্ভব হতো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সহজ ভাষায় বলতে গেলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুলিশে, প্রশাসনে, রাজনীতিতে, বিচার ক্ষমতায় নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারীদের অবস্থান লক্ষ্যণীয়। আর নারীরা নিজের মেধায় তা অর্জন করে নিচ্ছে।’ 

গ্লোবাল টেলিভিশনের সিইও সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপরই আমাদের সবকিছু নির্ভর করে। তাদের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। রাজনৈতিক দল হিসেবে কেবল আওয়ামী লীগেই সর্বোচ্চ ২৪% নারী সংসদ সদস্য রয়েছে। আমরা এতকিছু করলাম, কিন্তু উত্তরাধিকার আইন করতে গিয়ে ধর্মকে সামনে এনে আটকে দেয়া হলো। এটাতে হয়তো রাজনৈতির কোথাও না কোথাও কোনো একটা অঙ্গীকার আছে। অথবা কোনো একটা আপোষ আছে।’  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, ‘আজকে নারী-পুরুষের সমতার কথা বলা হলেও এখনো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তবে এই বৈষম্য দূরীকরণে শুধু আইন নয়, এর প্রয়োগও করতে হবে।’

  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক  ডা. জাহানারা আরজু  বলেন, ‘বৈষম্য দূরীকরণে শক্তিশালী লিঙ্গ নীতি প্রণয়ন করতে হবে। আমাদের দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হলেও এখনো নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।’  তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমাদের নারীদের গৃহের কাজকে ছোট করে দেখা হয়। বলা হয়, এটা কী কোনো কাজ হলো? এসব পশ্চাদপদ চিন্তা-চেতনা আমাদের দূর করতে হবে।’ 

বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি বলেন, ‘দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী আর অর্ধেক পুরুষ। নারীদের বাদ দিয়ে কোনোভাবেই টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সরকার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নারীদের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা অতুলনীয়।’  

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক ও সমাজকর্মী ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘সমাজ কর্তৃক কাজ, পোশাক, প্রথাগত আচরণ, চালচলন এবং রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত বিধি-নিষেধ দ্বারা বিভিন্ন লিঙ্গের মানুষের মাঝে বিভাজন রেখা সৃষ্টি করে দেয়ার নাম লিঙ্গ বৈষম্য। নানা সময়ে এই বৈষম্যের মুখোমুখি হয় নারীরা এবং এই বৈষম্য নারীদের ক্ষমতায়নের পথে প্রধান অন্তরায়।’

ডা. ফেরদৌস আহমেদ খন্দকার বলেন, ‘বাংলাদেশে কন্যাশিশুর জন্ম হলে বাবা-মায়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়। আমাদের দেশে একটা কন্যাসন্তান যখন নবম-দশম শ্রেণিতে ওঠে তখনই তাকে বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক ড. এম এম মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘নারীদের পিছিয়ে রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন অসম্ভব। দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী।’ 

সাদা-কালো হিজড়া উন্নয়ন সংঘের সভাপতি অনন্যা বণিক বলেন, ‘আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে আমরা লিঙ্গের স্বীকৃতি পেয়েছি, ভোটাধিকার পেয়েছি, সরকারি চাকরির অধিকার পেয়েছি। আমরা এখন দেশের জন্য কাজ করতে পারছি। দেশের উন্নয়নে নিজেদের অবদান রাখতে পারছি।’

সভাপতির বক্তব্যে বিবার্তা ২৪ ডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি বলেন, ‘এদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকার নারী কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীদের অবস্থান কতটুকু? শুধু মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ছাড়া নারী নেতৃত্ব আমরা সেভাবে দেখি না। তাছাড়া, প্রায় জায়গায় সংরক্ষিত নারী কোটা দেখা যায়। অনেক যোগ্য নারী আছেন, যাদেরকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শুধুমাত্র  নারী হওয়ার কারণে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।’    বিবার্তা২৪ ডটনেটের সাহিত্য সম্পাদক সামিনা বিপাশার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলা জার্নালের প্রকাশক ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান রোমেল, গৌরব ৭১’এর সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুপম।

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর