ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মুক্তিপণ দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগ
অপহরণের ১৮ ঘণ্টা পর মুক্ত এনবিআর’র নারী যুগ্মকমিশনার
অনলাইন ডেস্ক
প্রতীকী ছবি

রাজধানীতে ভয়ঙ্কর অপহরণ চক্রের হাত থেকে কোনো রকম প্রাণে বাঁচলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক নারী যুগ্মকমিশনার। বর্তমানে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পঞ্চাশ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে ওই নারীকে অপহরণ করে নিষ্ঠুর নির্যাতনসহ কৌশলে তার বেঁচে ফেরার রোমহর্ষক ঘটনা সামনে এসেছে। এ ঘটনায় মামলার পর গ্রেফতার করা হয়েছে চক্রের তিন সদস্যকে।

জানা গেছে, ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম মাসুমা খাতুন। তিনি এনবিআর-এর কর অঞ্চল-২-এ কর্মরত। গত শুক্রবার রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের  প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর তিনি কৌশলে মুক্তি পান। পরদিন শনিবার এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, নির্যাতনে বাঁ পা ভেঙে গেছে মাসুমা খাতুনের। তার চোখও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মাথা ফেটে যাওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বেঁধেছে। দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরও মন গলেনি অপরাধীচক্রের। মুক্তিপণের পুরো টাকা আদায়ের জন্য চলে শারীরিক নির্যাতন। দেওয়া হয় হত্যার হুমকি। হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। ভাগ্যগুণে বেঁচে যান তিনি।

আরও জানা যায়, ১৮ আগস্ট রাত ৮টার দিকে মাসুমা খাতুন বড় মগবাজার থেকে নিজের গাড়িতে করে সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় ফিরছিলেন। সোয়া ৮টার দিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তায় গাড়িটি পৌঁছালে একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। চালক গাড়িটি থামালে অপহরণকারীচক্রের সদস্যরা জোরপূর্বক গাড়িচালকের কাছ থেকে চাবি কেড়ে নেয়। এরপর তারা মাসুমা খাতুন ও গাড়িচালক আনোয়ারকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আনোয়ারকে গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে মাসুমাকে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় তারা। ওই রাতে সবুজবাগের একটি বাসার গ্যারেজে গাড়িটি ঢোকানো হয়। ওই গাড়িতেই আটকে রেখে তার ওপর রাতভর চলে নির্যাতন।

নির্যাতনের সময় মাসুমা খাতুনের চিৎকার যাতে বাইরে না যায়, সেজন্য তার মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। পরে পানি চাইলে স্কচটেপ খুলে দেওয়া হয়। এভাবে পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন। এ সময় তার কাছে থাকা দেড় লাখ টাকা ও একটি দামি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তারা। কিন্তু এই টাকা নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি।

এ ঘটনা নিয়ে মাসুমা খাতুনের স্বামী ইলিয়াস খান গণমাধ্যমকে জানান, গত ১৮ আগস্ট রাতে স্ত্রীর সন্ধান না পেয়ে রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। ১৯ আগস্ট বেলা ২টা পর্যন্ত তিনি স্ত্রীর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না। ২টার পর দুর্বৃত্তরা তাদের চক্রের দুই-তিনজনকে গাড়ির পাহারায় রেখে অন্যরা দুপুরের খাবার কিনতে যান। এই সুযোগে মাসুমা খাতুন গাড়ি থেকে নেমে বাঁচাও-বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করেন। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। এরপর মাসুমা খাতুনের স্বামী পুরো ঘটনা পুলিশকে জানায়।

জানা যায়, মামলার পর পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে শুরু করে। তদন্তে বেরিয়ে আসে, মাসুমার সাবেক গাড়িচালক মো. মাসুদ একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্য। মাসুদই পরিকল্পনা করে তাদের বাহিনীর সদস্যদের তথ্য দেয়, মাসুমা খাতুনকে অপহরণ করা গেলে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা সম্ভব। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগীদের নিয়ে মাসুদ এ ঘটনা ঘটায়।

এরই মধ্যে মাসুদের তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন সাইফুল ইসলাম, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে সাব্বির ও ইয়াছিন আরাফাত রাজু। তবে মাসুদকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া তার অন্য সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে শান্ত, পনু, শাহীনসহ আরও ৫-৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ।

এদিকে, একদিনের রিমান্ড শেষে গ্রেফতার তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া তিনজনই পুলিশের রিমান্ডে অপহরণের দায় স্বীকার করেছে। মাসুদসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় পুলিশ। ইতোমধ্যে মাসুদের বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ ঘটনা নিয়ে রমনা মডেল থানার ওসি আবুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, ভিকটিমকে উদ্ধার এবং তিন আসামি গ্রেফতারের পর তাদের বিরুদ্ধে ১৯ আগস্ট একটি মামলা হয়। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে এসআই সহিদুল ওসমান মাসুমকে।

গ্রেফতার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ওসি আরও বলেন, মাসুদ তার সহযোগীদের জানিয়েছিল, যুগ্মকমিশনার মাসুমাকে অপহরণ করতে পারলেই মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা যাবে। টাকার লোভেই এই অপহরণের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। চক্রে একাধিক পেশাদার সদস্য রয়েছে। ভিকটিম এবং গ্রেফতার ব্যক্তিদের বর্ণনা অনুযায়ী মাসুদের অভয়বের একটি চিত্র তৈরি করেছি। তার মুখে দাড়ি আছে। আমরা তার বাসা খুঁজে বের করেছি।

ভিকটিম মাসুমা খাতুন খুবই অসুস্থ। এ কারণে তার কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে পারিনি। তিনি সুস্থ হলে মাসুদ সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে। একইসঙ্গে দ্রুতই মাসুদ ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান ওসি আবুল হাসান।



এই পাতার আরো খবর