দুই মিনিট সাত সেকেন্ডের একটি ভিডিও। তাতে দেখা যাচ্ছে, একজন মানুষ ছবি তুলছেন। জায়গাটি রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকা। ভেতরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই মানিক মিয়া এভিনিউর দিকটায় লোহার রেলিংয়ের বাইরে থেকে হাত গলিয়ে মুঠোফোনে সংসদ ভবনের ছবি তুলছেন।
তবে সেটি কোনো স্মার্টফোন নয়। সাধারণ একটি ফিচার ফোন। ওই ফোনেই জাতীয় সংসদ ভবনের ছবি তুলে আনন্দ যেন আর ধরে না তার। এসময় প্রাণখোলা হাসিতে ফেটে পড়তে দেখা যায় তাকে। কোনো রকম এডিট ছাড়াই ফেসবুকে আপলোড করা হয় ওই ভিডিও।
সাধারণ ওই ভিডিওই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। মন ছুঁয়ে যাওয়া ভিডিও ক্লিপটিতে মুগ্ধ নেটিজেনরা। ভিডিও থেকে জানা গেলো চিত্রগ্রাহক একজন রিকশাচালক। স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্য নেই। তাই ফিচার (বাটন) ফোনেই ছবি তুলে ভীষণ খুশি তিনি। ভিডিও গ্রাহক ও চিত্রগ্রাহকের কথোপকথনে জানা গেলো ফোনটি দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটনের। ১৬ জিবি মোমোরি কার্ডও আছে ফোনটিতে। তাতেই শখের ছবিগুলো সংরক্ষণ করছেন তিনি।
গত শুক্রবার রাতে (২৭ আগস্ট) ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড করেন মাজহারুল হক মুহাজির নামে এক ব্যক্তি। ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘গত সপ্তাহের ঘটনা। আমি আর কাওসার ভাই সংসদ ভবনের মূল গেটের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সংসদ ভবনকে দেখে নানান মানুষ নানানভাবে ছবি তুলছে, আসছে-যাচ্ছে। আমাদের ওইদিকে খেয়াল নাই। আমরা নানান বিষয়ে কথা বলছি।
ঠিক এমন সময় একজন রিকশাচালককে রিকশা থামিয়ে হঠাৎ সংসদ ভবনের গেটের সামনে দ্রুত গতিতে আসতে দেখলাম। আমি খেয়াল করলাম উনি তার লুঙ্গির ভাঁজ থেকে মোবাইলটা বের করে ছবি তুলতে শুরু করলেন। তার পরের দৃশ্য, আলাপ-সালাপ একদম Raw Footage আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা।’
ওয়ালটন ফিচার ফোনের ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলোর ফ্রেমিংয়ের মুগ্ধ নেটিজেনরা। অনেকেই তার কম্পোজিশনের প্রশংসা করছেন। ভিডিওটি মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ৭২ হাজারের বেশি মানুষ দেখেছেন। অসংখ্য মানুষ শেয়ার করেছেন। সবার প্রশংসায় ভাসছেন ওই রিকশাচালক। প্রশংসিত হয়েছে তার ছবি তোলার ধরণও। অনেকেই তাকে আখ্যায়িত করেছেন ‘একজন সুখী ফটোগ্রাফার’ হিসেবে। তাকে স্মার্টফোন উপহার দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন অনেকে।
ভিডিওটি নজরে এসেছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষেরও। ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ খুঁজছিলো ওই রিকশাচালককে। তার ঠিকানা পেতে অনুরোধ জানায় ওয়ালটন কর্মকর্তাগণ। অবশেষে সোমবার (৩০ আগস্ট) তার খোঁজ পায় ওয়ালটন। জানা গেছে, পরিবার নিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে বাস করছেন তিনি। ওয়ালটনের পক্ষ থেকে ওই রিকশাচালকের জন্য অপেক্ষা করছে বিশেষ কিছু চমকের।
এ প্রসঙ্গে ওয়ালটন মোবাইলের মার্কেটিং ইনচার্জ হাবিবুর রহমান তুহিন বলেন, ওয়ালটন সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য কাজ করছে। ওয়ালটন পণ্যের দাম নির্ধারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়। ভিডিওতে প্রদর্শিত ওয়ালটন মোবাইলের ওই গ্রাহককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ তাকে সম্মানিত করার পরিকল্পনা করছে। শিগগিরই তাকে ওয়ালটন করপোরেট অফিসে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর