ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

অভিবাসন প্রক্রিয়ার ডিজিটালাইজেশনে কাজ করে যাচ্ছে আমি প্রবাসী
অনলাইন ডেস্ক

অভিবাসী শ্রমিকরা প্রায়ই আমাদের সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত অংশ। আমাদের অর্থনীতিতে তাদের যথেষ্ট অবদান থাকা সত্ত্বেও তারা সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত এবং প্রতিনিয়ত হয়রানি ও দুর্নীতির স্বীকার। সংকটের মুখ্য কারণ প্রবিধানের সাথে সহজাতভাবে বিদ্যমান নিয়ম পালনের জটিল প্রক্রিয়া, সরকারি অফিস, এজেন্সি এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের অফিসে একাধিকবার যাতায়াত এবং স্পষ্ট ও বিশ্বস্ত তথ্যের অপর্যাপ্ততা। এছাড়াও, অভিবাসী শ্রমিকরা বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে তাদের সাথে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম কিংবা সহজে সরকারি সহায়তা পাওয়ার কোন উপায় নেই। সবকিছুর মিলিত ফলাফলঃ ব্যাপক অপব্যবহার, ক্রমবর্ধমান অভিবাসন ব্যয় এবং প্রবাসীদের নিদারুণ কষ্ট।

আমি প্রবাসী কি? আমি প্রবাসী এ জাতীয় অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে তৈরি হয়েছে আমি প্রবাসী অ্যাপ ও ওয়েব পোর্টাল এবং পৃথিবীতে এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম এটাই প্রথম।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং থ্যান সিস্টেমস (বাংলা ট্রাক কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান)-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক ও পরিষেবা চুক্তি সম্পন্ন হবার পর ২০২১ সালের মে মাসে আমি প্রবাসী আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ সরকারের জন্য তৈরি এই অ্যাপের জন্য মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটি-এর কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয়নি এবং একটি ঐচ্ছিক পরিষেবা চার্জ মডেলে কাজ করে।

ব্যবহারকারীদের জন্য ঘরে বসে অনায়াসেই সরকার নির্ধারিত নানান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুযোগ তৈরির সাথে সাথে বিদেশে বৈধ চাকরির খোঁজ, ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তির আবেদন, চ্যাট সাপোর্ট ইত্যাদি ফিচার সহজলভ্য করার মাধ্যমে আমি প্রবাসী অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বায়ত্তশাসন, স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

অভিবাসন প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটালাইজ করতে আমি প্রবাসী অ্যাপ এবং ওয়েব পোর্টাল ডিজাইন করা হয়েছে। এতে জড়িত সকল পক্ষের সময়, অর্থ এবং হয়রানি হ্রাস পাচ্ছে।

একদিকে আমি প্রবাসী যেমন বিএমইটি রেজিস্ট্রেশনের মতো ডিজিটাল সরকারি পরিষেবা চালুর ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছে তেমনি দালাল বা মধ্যসত্বভোগীদের এড়িয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সরাসরি বৈধ অসংখ্য রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে সংযুক্ত করেছে। 

সরকারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিকল্প চ্যানেল বিদেশ যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের প্রয়োজনীয় সরকারি প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আমি প্রবাসী একটি বিকল্প ও অতিরিক্ত চ্যানেল। যে কেউ চাইলে এখনও সরকারি অফিসগুলোতে গিয়ে প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করতে পারবেন। কিন্তু, সময়, যাতায়াত এবং মাত্রাতিরিক্ত ‘স্পিড মানি’ (উৎকোচ) বিবেচনায় ডিজিটাল পদ্ধতি বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। অ্যাপটির দরুণ একজন ব্যবহারকারী কোন দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীর উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেই এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছেন।

বিদ্যমান সরকারি ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ার সুবিধাভোগী গোষ্ঠী এবং দালালদের শত বাধা ও অপপ্রচার সত্ত্বেও প্রায় ২৫ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী নিয়ে আমি প্রবাসী দালালমুক্ত একটি কার্যকরী ডিজিটাল অভিবাসন প্রক্রিয়া তৈরিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

বিএমইটি তথ্য ভাণ্ডার কি? বিদেশে চাকরি নিয়ে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের একমাত্র সরকারি তথ্য ভাণ্ডার, বিএমইটি তথ্য ভাণ্ডার। একজন অভিবাসন প্রত্যাশী তার দক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পছন্দের দেশ ইত্যাদি তথ্য দিয়ে এই তথ্য ভাণ্ডারে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। মাত্র ১০০ সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে আমি প্রবাসী তার ব্যবহারকারীদের এই তথ্য ভাণ্ডারে ডিজিটালি এন্ট্রির সুযোগ করে দিয়েছে। আমি প্রবাসীর মাধ্যমে, মাত্র ছয় মাসে বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন ৫০০% বেড়েছে! প্ল্যাটফর্মটি এখন পর্যন্ত সরকারকে ২০ কোটি টাকারও বেশি দিয়েছে।

করোনা এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক ভ্যাকসিনেশন বাংলাদেশ সরকার এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিদেশগামী কর্মীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিনেশন চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মন্ত্রণালয় নিবন্ধিত বিদেশগামী কর্মীদের বিএমইটি নম্বর ‘সুরক্ষা’য় প্রেরণ করে কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রদানের প্রস্তাব রাখে। মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে, পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে মহামারীর মাঝে আমি প্রবাসী দশ লক্ষেরও বেশি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে। এবং এতে সরকারের কোন অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়নি। আমি প্রবাসী এই পরিষেবাটি প্রদান করায়, লক্ষ লক্ষ প্রবাসী কর্মীকে বিভিন্ন জেলা জনশক্তি অফিসে সরাসরি যাতায়াত না করে এবং লাইনে না দাঁড়িয়ে দ্রুত করোনার ভ্যাক্সিনেশনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে সক্ষম  হয়েছে। এতে সম্ভাব্য কোভিড সংক্রমণ থেকেই কেবল প্রবাসীরাই নন বরং তাদের পরিবার ও পাড়া-প্রতিবেশীরাও রক্ষা পেয়েছেন।

স্বায়ত্তশাসন ও চাকরির খোঁজ বর্তমান ম্যানুয়াল পদ্ধতিকে ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে পুরো অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বায়ত্তশাসন অর্জিত হচ্ছে যা দিন শেষে অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ব্যাপক আর্থিক সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখছে। অভিবাসন প্রত্যাশীরা আমি প্রবাসীর মাধ্যমে সরকার অনুমোদিত চাকরির সন্ধানের পাশাপাশি দালাল বা মধ্যসত্বভোগীদের এড়িয়ে সরাসরি বৈধ অসংখ্য রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে ইন্টারভিউ ও অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করতে পারেন। [বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমি প্রবাসী নিজ থেকে কোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে না।] এমপ্লোয়ার পোর্টালের মাধ্যমে নিয়োগকর্তা এবং ব্যবহারকারীর সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এবং এখানেও সহজে মধ্যস্বত্বভোগীদের এড়ানো সম্ভব হচ্ছে। একজন ব্যবহারকারী অ্যাপের মধ্যেই দেশভিত্তিক খরচ থেকে শুরু করে নিকটস্থ দূতাবাস কিংবা পাসপোর্ট অফিসের নিয়মকানুনসহ বিদেশ যেতে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পাচ্ছেন। ফলে তারা ভুল পথে কিংবা কোন ফাঁদে পা দিচ্ছেন না।  

টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ডিজিটালাইজেশন আমি প্রবাসী দেশব্যাপী ৬৪টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) এবং ৬টি মেরিন টেকনোলোজি ইন্সটিটিউট-কে অটোমেটেড এবং ডিজিটালাইজ করে ডিজিটাল সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থা করেছে। এজন্য মন্ত্রণালয় বা বিএমইটিকে কোনো প্রকার অর্থ ব্যয় করতে হয়নি।

মান-সংযোজন পরিষেবা (VAS): ব্র্যাক এবং প্রবাসীর ট্যাক্সির সাথে অংশীদারিত্ব ব্র্যাকের সাথে অংশীদারিত্বের কারণে আমি প্রবাসী ব্যবহারকারীরা নিকটবর্তী ব্র্যাক সেন্টার খোঁজ করতে পারবেন, ব্র্যাক রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে যোগাযোগ, ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে নির্দিষ্ট কোর্সে ভর্তি হবার পাশাপাশি ব্র্যাক রিটার্নি মাইগ্রেশন ফর্ম পূরণ করতে পারবেন।

প্রবাসীর ট্যাক্সির সাথে স্বাক্ষরিত নতুন সমঝোতা অনুযায়ী আমরা বিদেশ যেতে আগ্রহী এবং বিদেশফেরত কর্মীদের বিমানবন্দরে গমন এবং বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য পরিবহনের নিশ্চয়তা দিতে পারব।

সরকারি পরিষেবা আমাদের লক্ষ্য কেবলমাত্র বিদেশ গমনেচ্ছু অভিবাসীদের চাকরি এবং প্রশিক্ষণ পেতে সাহায্য করা নয় বরং বিদেশে যাওয়ার সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয়ে তাদের যথাযথভাবে অবগত করা। শীঘ্রই আমাদের অ্যাপে প্রি-ডিপারচার ওরিয়েন্টেশন (পিডিও), ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল (ডব্লিউইডব্লিউবি) সদস্যপদ এবং বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স-এর মতো পরিষেবা শীঘ্রই চালু হলে, চাকরি নিয়ে বিদেশ গমনেচ্ছুগণ অফিসে গিয়ে সরাসরি যে কাজগুলো করতে হত তা ঘরে বসেই করতে পারবেন এবং এতে তাদের এর সাথে সম্পর্কিত ব্যয়ের সাশ্রয় নিশ্চিত হবে।

সাপোর্ট সেন্টার  আমাদের ২৪/৭ কল সেন্টার এবং লাইভ চ্যাট সুবিধা বিদেশ যেতে ইচ্ছুক এবং বিদেশে অবস্থানকারী কর্মীদের নিয়মিত সহায়তা প্রদান করছে। 

তথ্য বিশ্লেষণ আমি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে নিয়মিত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য যেমনঃ আবেদনকারীদের দক্ষতা, অবস্থান, পছন্দের চাকরি, দেশ প্রভৃতি প্রদান করছে। যা সরকারকে তথ্য বিশ্লেষণ প্রদান করে আমাদের কর্মীদের বিদেশ প্রেরণ সংক্রান্ত আলোচনা ও জনশক্তি রপ্তানিতে কৌশলগত পন্থা অবলম্বনে সহায়তা করছে।এছাড়াও এই তথ্য পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রয়োজনীয়তা মোকাবেলায় আমাদের কর্মীদের জন্য কি ধরনের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত তা নির্ধারণেও মন্ত্রণালয়কে সাহায্য করে। 

আমি প্রবাসী অ্যাপে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিস, মেডিকেল সেন্টার, জেলা জনশক্তি অফিস এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস/মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

স্বার্থান্বেষী মহলের ক্রমাগত অপপ্রচার সত্ত্বেও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এর সহায়তায় অভিবাসন প্রক্রিয়ার ডিজিটালাইজেশনে আমি প্রবাসী নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। 

 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা/পাভেল



এই পাতার আরো খবর