ঢাকা, রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে ভিন্নধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
অনলাইন ডেস্ক

বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আমাদের দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ের একটি নিয়মিত আয়োজন। কিন্তু রংপুর ও নীলফামারী জেলার বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দেখা মিলবে ভিন্নরকম চিত্রের। এসব বিদ্যালয়ে দেখা যাবে মেয়েরা খেলছে ফুটবল, ক্রিকেট, সাইকেল রেইস, হাডুডু, মোরগ লড়াই; বিপরীতে ছেলেদের জন্য রয়েছে সুই-সুতা, বালিশের কভার পরানো, কাপড় গোছানো, দাড়িয়া বান্ধার মতো খেলাগুলো। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সমাজের প্রচলিত চর্চা ভেঙে নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতা বিধানের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ব্যাতিক্রমী ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলো আয়োজনে সাহায্য করছে জয়েন্ট অ্যাকশন ফর নিউট্রিশন আউটকাম বা জানো প্রকল্প। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেগুলোর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সাথে সমন্বয় করে আয়োজন করা হয় এই ব্যতিক্রমী ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলো।

রংপুর ও নীলফামারীর সাতটি উপজেলার ৩৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন আয়োজন করে থাকে জানো, যার অর্থায়ন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সহ-অর্থায়নে আছে অস্ট্রিয়ান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন। কনসোর্টিয়াম গঠনের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে কেয়ার বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও ইকো স্যোশাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) যেখানে কাজ করা হচ্ছে দুই জেলার ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী প্রায় ৪ লক্ষ ২১ হাজার ৪২৫ জন কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে।

জানো প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৯ সালে বিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সাথে সমন্বয় করে এই ভিন্নধর্মী খেলাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রথম দিকে এই খেলাগুলো আয়োজন করা নিয়ে এক ধরণের শঙ্কা ছিল শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ভেতর। শুরুতে অংশগ্রহণ কম হলেও সময়ের সাথে সাথে এই খেলাগুলোয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে নিয়মিত, ছেলে-মেয়েরাও উৎসাহী হয়ে উঠেছে। ক্রিকেট, ফুটবল, কারাতে, সাইকেল রেসিং যে শুধু ছেলেদেরই খেলা, একইভাবে বালিশে কভার পরানো সুইয়ে সুতা পরানো মেয়েদের খেলা, চিরাচরিত সেই ধারণায় পরিবর্তন আসছে এসব খেলার মাধ্যমে।

“আগে এই খেলাগুলো নিয়ে ভয় পেতাম। বাড়িতেও খেলতে দিতো না ছেলেদের খেলা ও দুর্ঘটনা ঘটবে বলে। কিন্তু স্কুলে দেখার পরে আমাকে এখন এসব খেলতে দেয়। আমি স্কুলে প্রতিবছর সাইকেল রেইসে অংশগ্রহণ করি”। এভাবেই নিজের  অনুভূতি ব্যক্ত করছিলো  ঘনিরামপুর বড় গোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আঁখি মনি। শুধু খেলার ক্ষেত্রেই নয়, জানোর এই কার্যক্রম পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কারের ক্ষেত্রেও। এসব খেলায় বিজয়ীদের মধ্যে দেশীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাসের পাশাপাশি পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে জানানোর জন্য বিজয়ীদেরকে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হচ্ছে বই, পুষ্টি প্লেট ও পুষ্টি মগ। বই এর মধ্যে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, সর্বজয়ী কাজী নজরুল, আবার কখনো কখনো থাকে ডিকশনারি ও ভোকাবুলারির বই। 

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হলদীবাড়ি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম মনে করেন, “জানোর এই প্রকল্পের মাধ্যমে মেয়েদের অংশগ্রহণের ফলে গতানুগতিকভাবে যেসব খেলাকে ছেলেদের খেলা বলা হতো, সেই ধারনায় পরিবর্তন এসেছে। তাই ছেলে ও মেয়েদের  মধ্যে জেন্ডার বৈষম্যের ধারণা দূর হচ্ছে। মেয়েরা আরো বেশি আত্মনির্ভরশীল হিসেবে বেড়ে উঠছে এবং তারা যে ছেলেদের তুলনায় পিছিয়ে, সেই ধারণাও পরিবর্তিত হচ্ছে”।

তবে, ভিন্নরূপী এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সকল পরিবর্তন শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রেই নয়, বরং ছেলেদের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। এসব খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে ছেলেরা এখন নিজেদের বাস্তব জীবনে বিদ্যমান কাজের বিভাজন ও বৈষম্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। তারা এখন বাড়িতে রান্না, পুষ্টি বাগান তৈরি ও পরিচর্যা, ঘর গোছানোর মতো কাজগুলোতে মা ও বোনদের সহায়তা করছে।

নীলফামারী জেলার শিক্ষা অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম মনে করেন, বাংলাদেশ সরকারের সাথে জানো প্রকল্পের সমন্বয়ের মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলোতে জেন্ডার সমতা আনয়ন, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যোন্নয়নকে তরান্বিত ত করছে। কোন কাজগুলো নারীর আর কোনো কাজগুলো পুরুষের, সেই আদি ধারণার পরিবর্তনের মাধ্যমে জানো প্রকল্প বিদ্যালয় ও কমিউনিটি পর্যায়ে যে পরিবর্তন নিয়ে আসছে, তা দুই জেলার সর্বস্তরে প্রশংসিত হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা



এই পাতার আরো খবর