ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রবাসী
ইমাদ আহমেদ

দেশের অর্থনৈতিক খাতে অভিবাসীরা অবদান রাখছে বহু বছর ধরে। সমগ্র অভিবাসীদের সমষ্টিগত আয়ের কারণে একটি দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হয়। বিশ্বের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এই অভিবাসীদের সম্প্রদায়কে ইংরেজিতে বলা হয় ‘ডায়াসপোরা’। যাদের সংখ্যা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৩.৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২৭২ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে বসবাস করছে। 

ডায়াসপোরা কমিউনিটি বা প্রবাসীরা নিজের দেশের সাথে কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত থাকে। সাংস্কৃতিক বিনিময়, বিনিয়োগ অথবা রেমিট্যান্স প্রদান— এমন নানা মাধ্যমে তারা অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়তা করে যায়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৭৭৩ বিলিয়ন ডলার। যেখানে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২১ বিলিয়ন ডলারে। আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে এই তহবিলগুলো কাজ করে। দেশের মৌলিক চাহিদা, শিক্ষাখাত এবং স্বাস্থ্যসেবায় যা খরচ করা হয়। এমনকি উদ্যোক্তা নির্মাণে এবং বিনিয়োগের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতেও রেমিট্যান্সের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

রেমিট্যান্স ছাড়াও, ব্যবসা, রিয়েল এস্টেট এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নেয়। বিদেশি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে স্টার্টআপ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা এবং উদ্যোগে তারা বিনিয়োগ করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্থানীয় বাজার এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকার কারণে প্রবাসীদের করা বিনিয়োগ গতানুগতিক বিদেশি বিনিয়োগ থেকে ভালো হয়।

বাংলাদেশের প্রবাসী

মূলত মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার অঞ্চল জুড়ে ১০ মিলিয়নয়ের বেশি বাংলাদেশি আছে। ২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স অর্জন করে, যা পৌঁছায় ২২.৪ বিলিয়ন ডলারে।

একটি জাতির অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এবং অর্থ আদান-প্রদানের ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি মানুষের জীবিকা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়ে উঠে প্রবাসী আয়ের তহবিল। একইভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভাগ্যের চাকা ঘোরাতেও বাংলাদেশি প্রবাসীরা ভূমিকা রেখে আসছে অনেক বছর ধরে। যারা কিনা ছড়িয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত।

প্রবাসীদের এই সম্পৃক্ততা নির্ভর করে মানি ট্রান্সফার অথবা আর্থিক লেনদেন কেন্দ্রিক পরিষেবাগুলোর উপর। তাই এই পরিষেবাগুলোয় অ্যাক্সেস করার প্রক্রিয়া এবং এর কার্যকারিতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রচলিত আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমগুলো ব্যয়বহুল, জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হয়ে থাকে, যা রেমিট্যান্স পাঠানো এবং বিনিয়োগের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর এমন ক্ষেত্রে ট্যাপট্যাপ সেন্ডের মতো পরিষেবাগুলো ফিনটেক বা আর্থিক প্রযুক্তিগত সমাধান দেয় আরও কার্যকরীভাবে।   নির্ভরযোগ্য আর্থিক সেবা

ট্যাপট্যাপ সেন্ডের মতো এই প্ল্যাটফর্ম নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী হওয়ায় প্রবাসীদের পরিবারগুলোর জন্য একটি প্রয়োজনীয় প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে। সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকার পাশাপাশি শূন্য-ফি তে লেনদেনের মতো অতিরিক্ত সুবিধা দেয় ট্যাপট্যাপ সেন্ডের মতো পরিষেবাগুলো। যার মধ্য দিয়ে নিরাপদে এবং সুবিধামত গ্রাহকদের অর্থ গন্তব্যে পৌঁছানো নিশ্চিত হয়।

এমনকি এই আর্থিক লেনদেন সেবাগুলো স্থানীয়দের রীতি-নীতি, সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা রাখে। যেন সেখানকার জনগোষ্ঠীর জন্য পরিষেবার কার্যক্রম সুনির্দিষ্টভাবে পরিচালনা করা যায়। যেমন, বাংলাদেশের মানুষ ছাড়াও এই দেশের স্থানীয় মসজিদ, সংগঠন এবং স্থানীয় রাষ্ট্রদূতদের সাথে যৌথ উদ্যোগে কাজ করে ট্যাপট্যাপ সেন্ড। এতে বাংলাদেশের ভিন্ন সব সম্প্রদায়গুলোর সাথে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়।

দেশ বা অঞ্চলভেদে বাজার এবং সেখানকার প্রেক্ষাপট বোঝার জন্য উক্ত স্থানের জনবল প্রয়োজন হয়। এই ভিত্তিতে ট্যাপট্যাপ সেন্ড প্ল্যাটফর্মটিও একই পন্থা অনুসরণ করে। বাংলাদেশের মার্কেটের জন্য এর কাস্টমার সার্ভিসে বাংলাদেশিদেরও নিয়োগ করা হয়। এছাড়া, স্থানীয়দের জন্য দাতব্য সেবা দেয়ার ক্ষেত্রেও প্ল্যাটফর্মটি এগিয়ে আসে। ২০২২ সালের মে মাসে সিলেটের বন্যার পরিস্থিতির মতো এমন নানান সময়ের তাদের প্রচেষ্টা এর উদাহরণ।

বিদেশে পাড়ি জমানোর পরেও নিজ দেশের সাথে সংযুক্ত থাকার বিষয়টি জটিল। প্রবাসীরা যাতে তাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে, সেই জন্যে এক্ষেত্রে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা। বিনিয়োগ, উদ্যোক্তা এবং তথ্য বিনিময়ের জন্য একটি সক্রিয় জায়গা তৈরি করার লক্ষ্যে একইসাথে সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং প্রবাসী সংগঠনগুলোর কাজ করতে হবে।

বিশ্বজুড়ে অভিবাসনের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। স্বদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ গঠনে প্রবাসীরা এখন অংশগ্রহণ করছে সক্রিয়ভাবে। উদ্ভাবনী সমাধান এবং যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের এই অবদান হতে পারে আরও বেশি যা সর্বোপরি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে লক্ষণীয়ভাবে।

লেখক: প্রবাসীদের জন্য রেমিট্যান্স পাঠানোর অ্যাপ ‘ট্যাপট্যাপ সেন্ড’ এ কাজ করছেন। 

বিডি প্রতিদিন/ বিজ্ঞাপন বার্তা



এই পাতার আরো খবর