ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

জামানতবিহীন সুদ তথ্য প্রযুক্তিখাতের সময়ের দাবি : এলিট
অনলাইন ডেস্ক
নিয়াজ মোর্শেদ এলিট

বাংলাদেশের একজন আলোচিত তরুণ উদ্যোক্তা নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। বাংলাদেশের মোবাইল আর্থিক সেবায় বিপ্লব আনা নগদের সাফল্যমণ্ডিত যাত্রার সঙ্গী তিনি। তারা এখন কাজ করছেন ডিজিটাল ব্যাংক নিয়ে। সফটওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট সেবা খাতের সংগঠন বেসিসের নির্বাচনের আগে এলিট কথা বলেছেন বাংলাদেশের তরুণ আইসিটি উদ্যোক্তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে। এই একান্ত সাক্ষাৎকারে এলিট বলেছেন, নগদ ডিজিটাল ব্যাংক আইসিটি উদ্যোক্তাদের বড় একটা স্বাধীনতা দেবে। 

প্রশ্ন : তথ্য প্রযুক্তিখাতে দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের একটা বড় সমস্যা হলো, তারা ব্যাংক লোন পেতে সমস্যায় পড়েন। ফলে প্রয়োজনীয় ফাইন্যান্সিং তারা পান না। এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?

নিয়াজ মোর্শেদ এলিট : এটা শুধু তথ্য প্রযুক্তি নয়, সব খাতের তরুণ উদ্যোক্তাদেরই এটা একটা বড় সমস্যা। এই উদ্যোক্তারা যখন শুরু করেন চমৎকার আইডিয়া নিয়ে শুরু করেন। কিন্তু তাদের হয়তো তেমন ক্যাশফ্লো থাকে না। আবার ব্যাংক থেকে ঋণ পেতেও দেখানোর মতো যথেষ্ট জামানত থাকে না। এখানে উচ্চ হারের সুদও একটা সমস্যা। ফলে এই উদ্যোক্তাদের ভরসা করতে হয় এঞ্জেল ইনভেস্টরের ওপর-সেটা আবার কয়জনই পারে। এখন ক’জন উদ্যোক্তার বাবা-বা আত্মীয়-এরকম খাতে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত থাকেন? সেজন্য তাদের আসলে বিনিয়োগ নিয়ে কঠিন একটা সময় পার করতে হয়। আমি মনে করি, নীতিগতভাবে এদের জন্য রাষ্ট্রের, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কিছু করার আছে। এই তরুণ আইসিসি উদ্যোক্তাদের জন্য একটা বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। সেখান থেকে ব্যাংকগুলো তাদের বিনা জামানতে ও সিঙ্গেল ডিজিট সুদে যাতে ঋণ দিতে পারে। তথ্য প্রযুক্তিখাতের উদ্যোক্তাদের জন্যে জামানতবিহীন এবং সিঙ্গেল ডিজিটের সুদে ঋণ দেওয়া সময়ের দাবি।

প্রশ্ন : ব্যাংকগুলোর পক্ষে কী আদৌ এটা করা সম্ভব?

এলিট : অবশ্যই সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে এক্ষেত্রে আমাদের আলোচনায় যেতে হবে। একটা বরাদ্দ রাখতে হবে এদের জন্য। সেই সাথে ব্যাংকগুলোকে ক্রেডিট রেটিং সিস্টেমের ওপর জোর দিতে হবে। যাতে প্রথাগত জামানত ছাড়াই ঋণ দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি, নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের কথা। আমরা যাত্রার শুরুতেই এই উদ্যোক্তাদের জন্য বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করতে চাই।

প্রশ্ন : নগদ ডিজিটাল ব্যাংক এটা কীভাবে করবে?

এলিট : দেখুন, নগদ শুরু থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করলে আমরা প্রান্তিক মানুষের জন্য এবং উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের জন্য সিঙ্গেল ডিজিট ও জামানতহীন ঋণ দেবো। অল্পদিনেই চালু হবে এই ডিজিটাল ব্যাংক। জামানতবিহীন এই ঋণের জন্যে আইসিসি উদ্যোক্তারা অবশ্যই একটা অগ্রাধিকার পাবেন। কারণ, নগদ নিজেই একটি তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। আমরা চাই এরকম প্রতিষ্ঠান আরও বেশি উঠে আসুক। আর এই জামানতহীন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা মূলত ক্রেডিট রেটিং ব্যবহার করবো। আর পুরো ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করা হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহার করে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের তরুণ আইসিটি উদ্যোক্তাদের এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারের জন্য প্রস্তুত করতে আপনাদের কী করণীয় আছে?

এলিট : সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তারা হাইটেক পার্কসহ নানা সুযোগ সুবিধা গড়ে তুলছে। কিন্তু এখানে শুধু সরকারের দিকে চেয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমি মনে করি এই জায়গাটায় বেসিসের মতো প্রতিষ্ঠানের অনেক কিছু করার আছে। বেসিস নিজেই তরুণ জনশক্তি ও নতুন তথ্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। তাদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া সরকারের সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারের দুটি ভিন্ন দুটি প্রকল্প আসছে। এই দুটি প্রকল্পই তথ্য প্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করবে। বেসিসের সুযোগ আছে এখানে সরকারের সঙ্গী হিসেবে কাজ করার।

প্রশ্ন : ২০২৪ সালে তথ্য প্রযুক্তি খাতে ট্যাক্স হলিডে উঠে যাওয়ার কথা। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

এলিট : এটা খুব আত্মঘাতী একটা ব্যাপার হতে পারে। এই খাত থেকে করের এই ছাড় উঠে গেলে যে বিপুল সম্ভাবনা আছে, তা আলোর মুখ দেখা সম্ভব হবে না। আমরা যে স্বল্পমূল্যে সফটওয়ার ও বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি পণ্য বিশ্ব বাজারে দেওয়ার আশা করছি, তার মূলে কিন্তু আছে করের রেয়াত। এই ছাড়টা না থাকলে বিশ্ব বাজারে আমরা টিকতে পারবো না এবং এই খাতে বৈশ্বিক উদ্যোক্তাদেরও টেনে আনতে পারবো না। ২০৪১ সালে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হতে চাই। আমি মনে করি, সেজন্য তথ্যপ্রযুক্তিকে শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। আর তা করতে গেলে ২০৪১ না হোক, অন্তত ২০৩১ সাল অবধি কর অব্যাহতি দিতে হবে।

প্রশ্ন : ২০৪১ সালে তথ্য প্রযুক্তির বিবেচনায় বাংলাদেশকে কোথায় দেখতে চান?

এলিট : এখানে আমার চাওয়া তো প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারণ করে দেওয়া লক্ষ্য পূরণ। বাংলাদেশকে স্মার্ট আর উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করা। এর আগে ২০২৭ সালের মধ্যে অন্তত ৭৫ শতাংশ লেনদেনকে ক্যাশলেস করার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই সামঞ্জস্য রেখে উন্নতি সাধন করতে হবে। আমি এমন একটা স্বপ্ন দেখি যেখানে যে কোনো সেবাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মিলবে। ছাপা টাকার কোনো লেনদেন হবে না। আর আমাদের সন্তানরা উন্নত বিশ্বের সুফল নিজের ঘরে বসেই পাবে।

প্রশ্ন : বেসিস নির্বাচনে জয়ী হয়ে এলে কোন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নজর দেবেন?

এলিট : আমার মনে হয়, এই খাতে নীতিগত অনেক পরিবর্তন ও সংযোজনের প্রয়োজন আছে। বেসিস থেকে সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ করে আমাদের নীতিগত স্তরে অনেক পরিবর্তন আনতে হবে। আর এটাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই।

বিডি প্রতিদিন/এমআই  



এই পাতার আরো খবর