ঢাকা, রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

দেশীয় আবহে ট্রেন্ডি পোশাক করাই ‘সারা’ ও ‘ঢেউ’র উদ্দেশ্য
অনলাইন ডেস্ক

দেশের পোশাক শিল্পে ‘সারা লাইফস্টাইলে’র পদচারণা মাত্র কয়েক বছরের। এরই মধ্যে ফ্যাশন পাড়ায় সাড়া ফেলেছে স্নোটেক্স গ্রুপের সহযোগী এই প্রতিষ্ঠান। স্বল্প সময়ে গুণগতমান ধরে রেখে ক্রেতা সাধারণকে সাধ্যের মধ্যে পণ্য এনে দিয়েছে। ফ্যাশন ব্র্যান্ডটি সময়োপযোগী ফ্যাশন, নকশায় বৈচিত্র্যতা এবং গুণগতমান ধরে রেখে সাশ্রয়ী মূল্যের পোশাক করে থাকে। পাশাপাশি পাশ্চাত্য ঘরনার পোশাকেও সাজিয়েছে  ‘সারা’র সাব ব্র্যান্ড ‘ঢেউ’। রইল ‘সারা লাইফস্টাইল’ লিমিটেড-এর পরিচালক শরীফুন রেবা’র সাক্ষাৎকার। 

প্রশ্ন: কত বছর পার করলো সারা?

উত্তর: ২০১৮ সালে মে মাসে সারা পথচলা। ফ্যাশন ব্র্যান্ডটি ছয় বছর পার করছে।

প্রশ্ন: আপনার নারী উদ্দ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শুনতে চাই।

উত্তর: বাবা ছিলেন সরকারী কর্মকর্তা। সে সুবাদে জেলায় জেলায় বেড়ানোর সুযোগ হয়েছে। ক্যান্টনমেন্টে হয় পড়াশোনা। স্কুল-কলেজ দুটোই। সবশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় অনার্স-মাস্টার্স। এরপর বিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময়ই অনেক পত্রিকায় কন্ট্রিবিউশন করতাম। এরপর পত্রিকায় কাজও করি। চার-পাঁচ বছর পর কোলে সন্তান (মেয়ে) আসার পর বিরতি নেই। এরপর আর সাংবাকিতায় ফেরা হয়নি। পরবর্তীকালে আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্নোটেক্সের পাশাপাশি দেশীয় একটি ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করার ভাবনা আসে। সে ভাবনা থেকেই আজকের ‘সারা লাইফস্টাইল’।

প্রশ্ন: পোশাকের ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতার কাহিনী জানতে চাই।

উত্তর: দেশীয় পোশাক শিল্পে ‘সারা’ একদম নতুন। আগে খুচরা ব্যবসায় সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। আমাদের স্নোটেক্স- মূলত ‘এক্সপোর্টেড বিজনেজ’। সেখানকার অভিজ্ঞাতার গল্পটা আলাদা। দেশীয় পোশাক শিল্পে পথচলার আগে, এই ব্যবসায় সম্পর্কে অসংখ্য তথ্য সংগ্রহ করি। যেমনঃ দেশীয় সংস্কৃতি, আবহাওয়া, পরিবেশ, মানসম্মত পোশাক এবং গ্রাহক চাহিদা ও সস্তুষ্টি বিবেচনা করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। সবমিলিয়ে এটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। যদিও আমরা এখনো শিখছি।

প্রশ্ন: ‘সারা লাইফস্টাইলে’র পথচলা ও করোনাকালীন প্রভাব।   উত্তর: করোনা মহামারি এক ভয়ঙ্কর বৈশ্বিক সমস্যা। যার প্রভাব বিশ্ববাসী দেখেছে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অনেকে আপনজন হারিয়েছেন। ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিশেষত, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। আমরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তবে আমরা থেমে থাকিনি। তখন ‘সারা’র পিপিই ও মাস্কের চাহিদা বেড়ে যায়। আমরা সারাদেশে মুনাফাহীন ‘পিপিই’ ও ‘মাস্ক’ সরবরাহ করেছি। উদ্দেশ্য- সংকটকালে দেশ ও জাতির কল্যাণ। এমনকি সারা সে সময় করোনা মোকাবেলায় সম্মুখসারির যোদ্ধাদের জন্য ‘সারা’ ১৮ হাজার ‘পিপিই’ ও ‘মাস্ক’ বিতরণ করেছে। অর্থাৎ কভিডকাল ব্যস্ততায় কাটে।

প্রশ্ন: ‘করোনা’ পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ- দুয়ে মিলে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। এ সংকট কিভাবে পার করছেন?

উত্তর: ক্ষতি তো সবারই হয়েছে। সবাই এই বৈশ্বিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আমরাও পেছিয়ে নেই। দুই বছরের চেষ্টার পর এখন আমরা ধকল কাটিয়ে উঠেছি।

প্রশ্ন: দক্ষতা ও আধুনিকতার মিশেলে সারা লাইফস্টাইলের পোশাক কেমন?

উত্তর: আমাদের উৎপাদন এবং তার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল। অত্যাধুনিক ল্যাবে পোশাকের সুতা, পণ্য এবং রঙ পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে শতভাগ সফল হলে তবেই আমরা সারা’র পোশাক তৈরি করছি। যেখানে বিবেচ্য বিষয়- পোশাকটি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কিনা বা পরিবেশের কোনো প্রভাব ফেলে কিনা ইত্যাদি। সর্বোপরী মানসম্মত পোশাকই প্রধান লক্ষ্য।

প্রশ্ন: দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে সারা লাইফস্টাইলে’র পরিকল্পনা...

উত্তর: পরিকল্পনা তো আছেই। আন্তর্জাতিক বাজারে ‘সারা লাইফস্টাইলে’র পোশাক অবশ্যই আনবো। তবে আমরা সময় নিচ্ছি। এখনো অনেক কাজ বাকি। দেশের অভ্যন্তরে গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করে তবেই দেশের বাইরে পা রাখবে ‘সারা লাইফস্টাইল’।

প্রশ্ন: সারার পোশাকের জনপ্রিয়তা কেমন?

উত্তর: খুবই ভালো। গ্রাহকদের সাড়াও পাচ্ছি। সে সাড়া যেন শতভাগ পাই সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। সাশ্রয়ী দামে ভালো মানের পোশাক পৌছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।

প্রশ্ন: ঈদ উপলক্ষ্যে থাকছে যেসব অফার।

উত্তর: ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ‘সারা’ ও ‘ঢেউ’ সব ধরনের পোশাকে দিচ্ছে মূল্য ছাড়। আমাদের পোশাকগুলো এমনিতে সূলভ মূল্যের। তার মধ্যে ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে ‘সারা’ ও ‘ঢেউ’-এর সব ধরনের পোশাকে ৩০% মূল্য ছাড়ের অফার নিয়ে এসেছি। সকল আউটলেট ও অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে কেনা যাবে এসব পোশাক। বিশেষ এই অফার আপাতত ঈদ পর্যন্ত চলবে। ক্রেতা চাহিদা বিবেচনায় এর মেয়াদকাল পরবর্তীতে আরও বাড়াতে পারি।

প্রশ্ন: সারা’র আউটলেট এবং ভবিষ্যত..

উত্তর: সারাদেশে সারার ১৪টি আউটলেট রয়েছে। দু-এক মাসের মধ্যে খুলনার আউটলেটটি যাত্রা শরু করবে। চলতি বছর আরও কয়েকটি আউটলেট উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। কেননা, ঢাকার বাইরে সারার জ্যাকেটের চাহিদা বেশি। তাই তো রাজধানীর বাইরে আরোও অনেক বেশি জেলা এবং উপজেলায় সারা লাইফস্টাইলকে নিয়ে যেতে চাই।

প্রশ্ন: নতুনদের জন্য পরামর্শ..

উত্তর: নতুনদের জন্য পরামর্শ একটাই সততার সাথে এগিয়ে যাওয়া। ক্রেতার সাথে কথার রাখার জন্য সততার বিকল্প নেই। সততা ছাড়া ব্যবসাকে গন্তব্যে পৌছে দেওয়া সম্ভব নয়।

প্রশ্ন: যেভাবে ঢেউ-এর পরিকল্পনা..

উত্তর: ঢেউ সারা’র সাব ব্র্যান্ড। মোটামুটি ছোট পরিসরেই ঢেউ এগোচ্ছে। মূলত পাশ্চাত্য আর দেশীয় পোশাকের আবহে আমরা ঢেউকে সাজিয়েছি। এ ধরনের পোশাকের চাহিদাও অনেক। মানুষ আজকাল অনেক বেশি ফ্যাশন সচেতন। তারমধ্যে একটা শ্রেণীর ক্রেতা রয়েছেন, যারা কেবল পাশ্চাত্যের ফ্যাশনই অনুসরণ করেন। তাদের জন্যই আমাদের ঢেউয়ের ভাবনা।

প্রশ্ন: যাদের উদ্দেশ্যে ঢেউ-এর ওয়েস্টার্ন আউটফিট..

উত্তর: ওয়েস্টার্ণ পোশাক কার না পছন্দ। বারো থেকে বাহাত্তর; সকলেই চান পাশ্চাত্যের ঢঙে নিজেকে রাঙাতে। তারমধ্যে অল্প বয়সী তরুণ-তরুণীরাই ঢেউয়ের ট্রেন্ডি পোশাক কেনেন।

প্রশ্ন: কেবলই ক্যাজুয়াল! নাকি করপোরেট প্রাঙ্গনেও আছে ঢেউ?

উত্তর: সারা ইতিমধ্যে করপোরেট পোশাক করছে। তবে ঢেউ আলাদা নকশা, প্যাটার্ন আর রং নিয়ে আমরা ঢেউয়েও করপোরেট আউটফিট এনেছি। যা অল্প ক’দিনের মধ্যেই আসছে।

প্রশ্ন: ঢেউ কেমন আউটফিট নিয়ে এসেছে? ফেব্রিক কেমন?

উত্তর: ঢেউ-এ সব ধরনের ফেব্রিকই ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সিনথেটিক ফেব্রিককে আমরা বেশি ব্যবহার করছি। কারণ, এ ধরনের ফেব্রিকে ওয়েস্টার্ণ আউটফিট বেশি মানানসই।

প্রশ্ন: সাব ব্র্যান্ড হিসেবে ঢেউয়ের ভবিষ্যত..

উত্তর: ঢেউকে নিয়ে আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা বিস্তর। শুধু দেশে নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও ঢেউকে এগিয়ে নিতে চাই। এটাই ‘ঢেউ’কে নিয়ে আমাদের মূল পরিকল্পনা। তবে এজন্য আমরা আরও সময় নিচ্ছি। নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছি।

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর