ঢাকা, রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ঘুম নেই মনিপুরী তাঁতপল্লীতে
সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার:

পাহাড় আর চা বাগান পরিবেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম পর্যটন এলাকা উপজেলা কমলগঞ্জ। এ উপজেলায় বসবাসরত আদিবাসীদের মধ্যে অন্যতম মণিপুরী সম্প্রদায়। এ সম্প্রদায়ের ৯৫ শতাংশ নারী জড়িত তাঁত শিল্পের সঙ্গে। আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী তাঁতসামগ্রীর চাহিদা বাড়ায় ঘুম নেই মনিপুরী তাঁত পল্লীতে। তাঁতবস্ত্র তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখানকার মানুষ।

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মনিপুরী তাঁত শিল্পীরা সারা বছরের মন্দা ভাব কাটিয়ে এখন শেষ সময়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। উপজেলার মণিপুরী অধ্যুষিত প্রায় ৩০টি গ্রামের ঘরে ঘরে চলছে তাঁতের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির কাজ। উপজেলার মাধবপুর, মঙ্গলপুর, রাণীরবাজার, কালারায়বিল, ভানুগাছ, বালিগাঁও, ইসলামপুর, তিলকপুর, ঘোড়ামারা, কোনাগাঁও, ছনগাঁও, তেতইগাঁও, হকতিয়ার খোলা, জালালপুর, কেওয়ালীঘাট, ভানুবিল, বন্দেরগাঁও, কান্দিগাঁও, ছয়চিরী, ভান্ডারীগাঁও, গঙ্গানগর, মকাবিল, গুলেরহাওর, টিলাগাঁও, মাঝেরগাঁও, নয়াপত্তন, হীরামতি গ্রামসহ প্রায় ৩০টি গ্রামে ঈদকে সামনে রেখে মণিপুরী তাঁতীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

তারা তৈরি করছেন মণিপুরী শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, মণিপুরি চাদর ও ভ্যানিটিব্যাগসহ বিভিন্ন ডিজাইনের তৈরি তাঁতসামগ্রী। সব মিলিয়ে ঈদে তাদের তৈরি তাঁতসামগ্রীর কদর বাড়ছে। এসব পণ্যের শৈল্পিক ও নান্দনিক ডিজাইন আজ দেশ ছাড়িয়ে ইউরোপ ও আমেরিকাতে স্থান করে নিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ট্রেড ফেয়ারে মণিপুরীরা দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মণিপুরী তাঁতের তৈরি কাপড়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা কমলগঞ্জে প্রতিদিন শত শত দেশি-বিদেশি পর্যটক বেড়াতে আসেন। বেড়াতে আসা পর্যটকরা এখান থেকে মণিপুরি তাঁতের তৈরি বিভিন্ন পোশাক ক্রয় করে থাকেন। বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে মণিপুরী পোশাক হচ্ছে প্রথম পছন্দ।

মণিপুরি তাঁতশিল্পী অনামিকা সিনহা বলেন, ঈদ ও পুজা উপলক্ষে অনেক পাইকার এসে অর্ডার দিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক পাইকার এসেছেন। তবে পর্যাপ্ত সুতা না পাওয়ার কারণে সব ক্রেতার চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, মনিপুরি তাঁত কাপড়ের কাঁচামাল ঢাকা, নরসিংদী কিংবা চট্টগ্রাম থেকে আনতে হয়।

তাঁত কাপড় ব্যবসায়ী আনন্দ মোহন সিংহ বলেন, ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী তাঁতের কাপড় দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। কমলগঞ্জসহ সিলেটের বিভিন্ন স্থানে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মণিপুরী তাঁতশিল্প প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র। বাংলাদেশ ব্যাংক চালু করেছে এসএমই ঋণ প্রকল্প। এসব কেন্দ্র থেকে প্রায় সব মণিপুরী পরিবার থেকেই নারীরা তাঁতের কাপড় তৈরি শিখে নিয়েছেন। তার মতে, শুধু প্রশিক্ষণ প্রদান ও তাঁত ঋন দিলেই চলবে না, সর্বাগ্রে প্রয়োজন মণিপুরী কাপড়ের কাঁচামাল সহজলভ্য করা।

মণিপুরী হ্যান্ডিক্রাফটসের স্বত্ত্বাধিকারী এন প্রদীপ কুমার সিংহ জানান, এই শিল্পের বিশ্বব্যাপী প্রসার ও তাঁতীদের রক্ষার জন্য সুদের হার কমিয়ে প্রকৃত তাঁতীদের আরও বেশি করে ঋণ দিতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য তাঁতশিল্পীরা জানান, দেশ-বিদেশে বাহারি মণিপুরী পোশাকের প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে। তাই সবার আগে কাঁচামাল প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ



এই পাতার আরো খবর