ঢাকা, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

হঠাৎ করেই ধসে গেছে শহর রক্ষা বাঁধ
‘চিৎকার শুইনা ঘুম থেইক্যা উইঠ্যা দেহি ঘর নাই’
কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

‘হঠাৎ কইরা চিৎকার চেঁচামেচি শুইনা ঘুম থেইক্যা উইঠ্যা দেহি রান্না ঘর নাই, ঘরের মালসামান সবই ভাইস্যা গেছে পানিতে’- বলেই কাঁদতে লাগলেন আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বিল গজারিয়া গ্রামের আহম্মদ শেখ। শুধু আহম্মদ শেখের বাড়ি ঘর নয়, হঠাৎ করেই শহর রক্ষা বাঁধ ধসে গেছে আরও অনেকেরই বাড়ি ঘর, গাছ পালাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র পানিরে তোড়ে ভেসে গেছে। 

আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান জানান, বন্যার আগে থেকেই শহর রক্ষা এ বাঁধটির বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। বন্যার পানি বাড়তে থাকায় বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। রবিবার সকালে সাড়ে ৬টার দিকে হঠাৎ করেই সাদিপুর গ্রামের বিল গজারিয়া এলাকার বাঁধের একটি অংশ তীব্র পানিরে স্রোতে ভেঙে যায়। মুহূর্তের মধ্যে কয়েকটি ঘর, গাছপাল ও ঘরের মূল্যবান সামগ্রী পানিতে ভেসে যায়। 

স্থানীয়রা জানান, বিকট শব্দে বাঁধটি ধসে গেলে সকলেই চিৎকার শুরু করে। যে যেভাবে পেরেছে দৌড়ে বাড়ি ঘর থেকে বের হয়েছে। অনেকেই ঘরের মালামাল বের করতে পারেনি। ফলে পানিতে ভেসে গেছে মালামাল। কেউ কেউ বাড়ির মালামাল রাস্তায় এনে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এখনো বাঁধের বেশ কিছু জায়গায় ফাটল থাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। বর্তমানে বাঁধ এলাকার ২০টি পরিবার তাদের বাড়ির মালামাল নিয়ে রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। ফলে বৃষ্টির মধ্যে তারা চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাঁধটির বিভিন্ন স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোন কাজ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ কারণেই বাঁধের একটি অংশ ধসে যায়। বাঁধ ধসে যাওয়ার কারণে সেখান দিয়ে দ্রুত গতিতে পানি প্রবেশ করছে বর্ধিত পৌরসভার কয়েকটি এলাকায়। এছাড়া পানি ঢুকে পড়েছে নগরকান্দা উপজেলার কয়েকটি গ্রামে। বাঁধ ধসে যাবার খবর পেয়ে দ্রুতই ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলা প্রশাসকসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। বাঁধ সংস্কারে বালির বস্তা ফেলার কাজ চলছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, রবিবার সকালে শহর রক্ষা বাঁধের ১০০ ফিট জায়গা ধসে গেছে। সেখানে বালির বস্তা ফেলে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা চলছে। 

এদিকে, পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এবং কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ায় ফরিদপুর-চরভদ্রাসন-সদরপুরের আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ায় সেখানে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। গত ১২ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি না বাড়লেও এখনও তা বিপ সীমার ১০৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, জেলার ৩০টি ইউনিয়নের ২২ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। তাদের সরকারি সহায়তা দেবার কাজ শুরু হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত



এই পাতার আরো খবর