ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মুমূর্ষু অবস্থায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল!
রোকনুজ্জামান পারভেজ ,শরীয়তপুর

শরীয়তপুর জেলার ১৫ লাখ মানুষের চিকিৎসার জন্য স্থাপিত শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে ভেঙে পড়েছে। জেলা হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলেও বর্তমানে এখানকার কার্যক্রম চলছে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সমান জনবল দিয়ে।

ফলে চিকিৎসা সেবা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি রোগীদেরও নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ডাক্তারের অপেক্ষায় থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার কারণে রোগীরা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। এসব হয়রানি থেকে মুক্তি চায় জেলার মানুষ। সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন ডাক্তার বৃদ্ধি করা।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৪ সালে হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের ভৌত অবকাঠামো, রোগীদের পথ্য ও ওষুধ সামগ্রী ১০০ শয্যার হলেও হাসপাতালের জনবল আগের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চেয়েও অনেক কম।

১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালেই যেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিকেল অফিসার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ ৫১ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে, সেখানে বর্তমানে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১৮ জন, যা অর্ধেকেরও কম।

এর মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করতে যাওয়ায় বহির্বিভাগে চিকিৎসক থাকেন মাত্র চার থেকে পাঁচজন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০০ রোগী বহির্বিভাগের চিকিৎসা নিতে আসে। ফলে একজন ডাক্তারকে প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ রোগী দেখতে হয়। ফলে রোগীরা যেমন দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকছেন চিকিৎসকের জন্য, তেমনি ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরাও হিমশিম খাচ্ছেন।

হাসপাতালে দুজন মহিলা ডাক্তার থাকলেও প্রসূতি বিভাগ, শিশু বিভাগসহ অন্যান্য আন্তঃবিভাগে নিয়মিত দায়িত্বপালন করায় বহির্বিভাগে বেশি সময় দেওয়া সম্ভব হয় না তাদের পক্ষে। ফলে বহির্বিভাগের নারী রোগীদের একরকম বাধ্য হয়েই শরণাপন্ন হতে হয় পুরুষ চিকিৎসকের কাছে।

এছাড়া হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন কনসালটেন্ট, অর্থোপেডিক্স কনসালটেন্ট না থাকায় রোগীরা দায়সারা চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। ১০০ শয্যার হাসপাতালে যেখানে ২১৭ জন জনবল থাকার কথা রয়েছে, সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ১১৭ জন।

হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক রোগী ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসা নেন। ফলে নার্সদের পক্ষে ভর্তি রোগীদেরও সঠিকভাবে সেবা করা সম্ভব হয় না। জরুরি মেডিকেল অফিসার, রেডিওগ্রাফার, জুনিয়র মেকানিক, নিরাপত্তা প্রহরী ও মালির কোনো পদ নেই এখানে। সুইপার ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে মাত্র চারজন, যা দিয়ে কোনোভাবেই ১০০ শয্যার জেলা হাসপাতালটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখা সম্ভব নয়।

হাসপাতালের ৩টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে রয়েছে একটি অ্যাম্বুলেন্স। তা দিয়ে কোনোরকম চলছে রোগী আনা-নেওয়ার কাজ। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও সরকারিভাবে তেলের বরাদ্দ না পাওয়ায় জেনারেটরটি চালু করা করা হয়নি। ফলে তীব্র লোড শেডিংয়ের সময় ভুতুড়ে অবস্থা সৃষ্টি হয় হাসপাতালের ভেতরে। অত্যাধিক গরমে অসুস্থ রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। 

আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, ৬ বছর আগে সদর হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালটির ভৌত অবকাঠামো, পথ্য ও ওষুধ সরবরাহ ১০০ শয্যার হলেও প্রয়োজনীয় জনবল এখনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

এছাড়া একের পর এক চিকিৎসকরা বদলি ও ডেপিডোশন নিয়ে চলে যাওয়ায় এখন মাত্র সাতজন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার সমস্যাগুলো জানানোর পরেও কোনো সমাধান হয়নি বলে জানান তিনি।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর