ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

টয়লেট ইজারা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা তোলার অভিযোগ
নাটোর প্রতিনিধি
পাবলিক টয়লেট লাগোয়া ফলের দোকান।

নাটোর পৌরসভার বড় হরিশপুরের গোল চত্বরের পাশে নাটোর পৌরসভার পাবলিক টয়লেট। শহরের ব্যস্ততম এই চত্বরকে ঘিরে সড়ক ও জনপথের জায়গায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চা-পান, ফলমূলের ব্যবসা করে আসছেন চারজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এসব দোকানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে টয়লেট থেকে।

৩৮ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা নিয়ে এসব দোকানের তিনটি থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে আদায় করতেন টয়লেটের ইজারাদার যুবলীগ কর্মী স্বাধীনের নিয়োজিত আব্দুস সালাম। তবে একজন দোকানি তার আত্মীয় বলে তাকে টাকা দিতো হতো না।

সম্প্রতি এই পাবলিক টয়লেটের দিকে নজর পড়ে পরিবহন ব্যবসায়ী ও নবগঠিত ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতারের। তিনি চলতি বছরের শুরুতে নাটোর পৌরসভা থেকে পাবলিক টয়লেটটি ৭০ হাজার টাকায় ইজারা নেন।

শুক্রবার তিনি দোকানের মালিকদের ডেকে দৈনিক ১০০ টাকা হারে ভাড়া দিতে নির্দেশ দেন এবং টয়লেটসহ এসব দোকান থেকে দৈনিক ১ হাজার ৩০০ টাকা চুক্তিতে ওমর আলী নামে এক ব্যক্তিকে ভাড়া দেন।

সচেতন এলাকাবাসীর প্রশ্ন গোল চত্বরের টয়লেটে কী এমন মধু আছে যে, আওয়ামী লীগ নেতাকে টয়লেট ইজারা নিতে হবে? দিনমজুর শ্রেণির মানুষ ব্যস্ততম মহাসড়কের পাশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক ও জনপথের জায়গায় চা-পান এবং ফলমূলের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করছে। টয়লেট ইজারা নিয়ে ফুটপাতের দোকান থেকে টাকা আদায় কি চাঁদাবাজি নয়?

সরেজমিন পাবলিক টয়লেট এলাকায় গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। টয়লেটে দায়িত্বরত ৭ বছরের এক শিশু জানান, বাবুল আখতারের কাছ থেকে দৈনিক ১ হাজার ৩০০ টাকা চুক্তিতে তার বোন জামাই ওমর আলী নিয়েছে। শনিবার থেকে তারা ভাড়া দিচ্ছে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও দৈনিক ১০০ টাকায় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টয়লেটে দায়িত্ব পালন করতে হয় এই শিশুকে।

টয়লেট লাগোয়া চা দোকানি জানান, এতদিন দৈনিক ৬০ টাকা করে দিতাম যুবলীগ কর্মী স্বাধীনকে। কাল থেকে নতুন ইজারাদার আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল আখতার আমার ১২০ টাকা আর বাঁকি তিনটি দোকান ১০০ টাকা করে দিতে হবে বলে জানিয়েছে। না দিলে এখান থেকে দোকান তুলে দেবেন, তাই বাধ্য হয়ে দিচ্ছি।

অপর চা দোকানি জানান, তিনি আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সেক্রেটারি। অনেক ক্ষমতাধর। আমরা দোকান দেই সড়ক ও জনপথের জায়গায়। তিনি পাবলিক টয়লেট ইজারা নিয়েছেন। সড়ক ও জনপথের জায়গা নয়। এটা তো রীতিমতো চাঁদাবাজি!

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফল ব্যবসায়ী জানান, আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল আখতার ইজারা নেওয়ার পর শুক্রবার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আমাদের ডেকে ১০০ টাকা করে ভাড়া দিতে বলেছেন। আমরা কাল থেকে দিচ্ছি। না দিয়ে উপায় নেই। তার অনেক ক্ষমতা। আমরা প্রতিবাদ করলে রোজগারের পথটি বন্ধ হয়ে যাবে।

নাটোর পৌরসভার সচিব সালাউদ্দীন জানান, ২০২০ সালে ৩৮ হাজার টাকায় টয়লেটটি ইজারা দেয়া হয়েছিল। এবার বাবুল আখতারকে পৌরসভা ৭০ হাজার টাকায় পাবলিক টয়লেটটি ইজারা দিয়েছে।

সড়ক ও জনপথের জায়গা তো আমরা ইজারা দিতে পারি না। আমাদের এখতিয়ার নেই। তাকে শুধু পাবলিক টয়লেট ইজারা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল আখতার জানান, আমি সবেমাত্র লিজ নিয়েছি। এখন পর্যন্ত টয়লেটটি বুঝে পাইনি। আসলে এ দোকানগুলোর জন্য টয়লেটে নারীরা আসতে বিব্রতবোধ করে। তাই আমি তাদের দোকানপাট সরিয়ে নিতে বলেছি। আমি ভাড়া বা চাঁদা চায়নি। এটা মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ।

দ্বিগুণ মূল্যে ইজারা নেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি আমার কথা রেকর্ড করতে পারেন। দেখা করেন সামনাসামনি বলে ফোন কেটে দেন।

নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, বড় হরিশপুর গোল চত্বরে ব্যস্ততম মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে তোলা দোকানগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা খুব শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান চালাবো।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর