ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সালথায় পুলিশ-স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষ, উপজেলা পরিষদ ধ্বংসস্তুপে পরিণত
কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

লকডাউন কার্যকর নিয়ে ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় স্থানীয়দের সাথে এসিল্যান্ডের বাদানুবাদের সূত্র ধরে তুলকালাম ঘটনা ঘটে গেছে। এ ঘটনার জের ধরে ৫ ঘণ্টাব্যাপী হামলা চালিয়ে নির্বিচারে ভাংচুর করা হয় সালথা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কক্ষ। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় কমপক্ষে তিনটি কক্ষ। আগুনে পুড়ে গেছে ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের দুটি জীপ গাড়ি। এছাড়া উপজেলা চত্বরে থাকা ৫টি মোটর সাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। 

হামলাকারীরা উপজেলা চত্বরে অবস্থিত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনেও হামলা করে নির্বিচারে ভাংচুর চালায়। হামলাকারীরা উপজেলা চত্বরের বিভিন্ন অফিস ভাংচুরের পাশাপাশি উপজেলা চত্বরের পাশে থানায়ও হামলা করে। এছাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিস, উপজেলা ভূমি অফিস ভাংচুর করে। এসময় দফায় দফায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় বিক্ষুব্ধ কয়েক হাজার মানুষ। 

স্থানীয়রা জানান, লকডাউন চলাকালীন সময়ে সোমবার বিকেলে সালথা উপজেলার এসিল্যান্ড হীরামনি ফুকরা বাজারে গিয়ে দোকান পাট বন্ধ করার কথা জানালে বাজারের ব্যবসায়ীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এসময় এসিল্যান্ডের সাথে থাকা এক কর্মচারী বাজারে থাকা জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে এসিল্যান্ডের সাথে বাদানুবাদ শুরু হয়। পরে খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান সালথা থানার একদল পুলিশ। এসময় বাজারে থাকা লোকজন পুলিশের উপর হামলা চালায়। এ ঘটনার পর সন্ধ্যার দিকে কয়েক হাজার মানুষ স্লোগান দিয়ে থানা ঘেরাও করে। এসময় পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছুড়লে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে। এসময় পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত হবার খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরই বিক্ষুব্ধ ও মারমুখী হয়ে উঠে বিক্ষুব্ধরা। তারা এসময় উপজেলা পরিষদে ঢুকে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। হামলাকারীরা ইউএনও, এসিল্যান্ড, উপজেলা চেয়ারম্যান, কৃষি দপ্তর, এলজিইডি, প্রাণী সম্পদ, খাদ্য বিভাগের কক্ষ ভাংচুর করে। ভাংচুরের পাশাপাশি এসব অফিস থেকে মূল্যাবান জিনিষপত্র লুট করে নিয়ে যায়। হামলাকারীরা তিনটি কক্ষ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এসময় তারা উত্তেজিত জনতাকে সরিয়ে দিতে শর্টগানের ৬০০ রাউন্ড বুলেট, ৩২ রাউন্ড কাদানো গ্যাস, ৭০ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ও ২২টি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। ৫ ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষের সময় র‌্যাব-পুলিশের ৭ সদস্যসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। আহতদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে। সন্ধ্যা থেকে চলা এ সংঘর্ষ রাত ১২টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সংঘর্ষ থামার পর ফরিদপুর ও সালথার ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি থমথমে থাকলেও গোটা উপজেলা চত্বর জুড়ে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা টহলে রয়েছে। 

পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। তাছাড়া কয়েক প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুতই আটকের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর