ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

লকডাউনে ক্ষতির মুখে ড্রাগন ফল চাষিরা
নাটোর প্রতিনিধি
ফল হাতে দাঁড়িয়ে ড্রাগন চাষি।

নাটোর জেলায় উৎপাদিত ড্রাগন ফল বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরের দেশগুলোতেও রফতানি হচ্ছে। তাই  ভরা মৌসুমে এই ড্রাগনকে নিয়ে জেলার শতাধিক ড্রাগন চাষি প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাস গত বছরের ন্যায় চলতি বছরেও ড্রাগন চাষিদের স্বপ্ন ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। বর্তমানে করোনা প্রতিরোধে সরকারের জারি করা লকডাউনে বাগানের ড্রাগন বিক্রি না হওয়ায় মাথায় হাত উঠেছে চাষিদের।

চাষিরা জানান, ড্রাগন ফল সংগ্রহের এই ভরা মৌসুমে শহর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা এবং পরিবহন সংকটের কারণে বেচাকেনা ও দাম দুটোই ব্যাপকভাবে কমেছে। ৫০০ টাকা কেজির ড্রাগন ফল এখন মাত্র ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে নাটোরের ড্রাগন ফল চাষিরা বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন। সব মিলিয়ে লোকসানের পরিমাণ প্রায় ২৬ কোটি টাকা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় জানায়, চলতি বছরে এই জেলার ৩০০ বিঘা (৪০ হেক্টর) জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে। এতে ৬৪০ মেট্রিক টন ফল উৎপাদন হওয়ার কথা। ৫০০ টাকা কেজি দরে হিসাব করলে ওই ড্রাগন ফলের দাম দাঁড়ায় ৩২ কোটি টাকা।

অথচ ফল চাষিরা এখন বিভিন্ন আড়তে মাত্র ১০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেই ক্রেতা মিলছে না। এই দরে সব ফল বিক্রি হলে তাতে চাষিদের ক্ষতি হবে ২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার মতো। ফলে পুরোনো ফল চাষিদের পাশাপাশি নতুনরাও পুঁজি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।

নাটোর জেলায় জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাগান থেকে ড্রাগন ফল সংগ্রহ শুরু করেন চাষিরা। কিন্তু এই সময়টাতেই দেশে কঠোর লকডাউন বা বিধিনিষেধ বলবৎ হয়। লকডাউনের কারণে শহরগুলোয় ফলের দোকানে বিক্রি কমে গেছে। বিধিনিষেধের কারণে রাজধানীর সঙ্গে নাটোর ও রাজশাহীর সরাসরি বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দেশের কোথাও ড্রাগন ফল পাঠানো যাচ্ছে না। আবার সব চাষির পক্ষে ট্রাক ভাড়া করে ড্রাগন পাঠানোও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নাটোরের সবচেয়ে বড় ড্রাগন চাষি গোলাম নবী চলতি বছর নাটোর সদর উপজেলার মাঝদিঘা গ্রামে ৩০ বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করেছেন। যেখানে রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ড্রাগন গাছ। গোলাম নবী জানান, আমাদের উৎপাদিত ফল ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরের আড়তগুলোতে বিক্রি করা হয়। কিন্তু চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় ভরা মৌসুমে শহরের আড়তদারেরা ড্রাগন ফল নিতে চাচ্ছেন না। তাদের দাবি, তারা খুচরা ক্রেতা পাচ্ছেন না।

গোলাম নবী আরও বলেন, বিক্রি করতে না পারলে কয়েক দিনের মধ্যেই ড্রাগন ফল পচে কিংবা শুকিয়ে যায়। তা ছাড়া নাটোরে ড্রাগন সংরক্ষণের মতো কোনো কোল্ড স্টোরেজ বা হিমাগার নেই। ফলে আড়তদাররা যে দর বলছেন তাতেই ফল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। অনেক সময় প্রতি কেজি ড্রাগন ১০০ টাকারও কম দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ প্রতি কেজি ড্রাগন উৎপাদনে খরচ ২০০ টাকারও বেশি।

আহম্মদপুর এলাকার ড্রাগন ফল চাষি মো. সেলিম রেজা জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে ড্রাগন ফলের আবাদ করছেন। কিন্তু ফল বিক্রি নিয়ে এবারের মতো কখনো এত মুশকিলে পড়েননি। ঢাকার সঙ্গে সরাসরি বাস-ট্রেন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো ফল পাঠাতে পারছেন না। এতে দাম অস্বাভাবিক কমে গেছে। ৫০০ টাকা কেজির ফল এখন ১০০ টাকা বা তারও কম দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

সেলিম রেজা আরও বলেন, এ অবস্থায় সরকার ড্রাগন ফল চাষিদের ভর্তুকি না দিলে অপ্রচলিত ও দামি এই ফলের আবাদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। তখন আগের মতো বিদেশ থেকে এই ফল আমদানি করতে হবে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার বলেন, ড্রাগন অপ্রচলিত ও দামি ফল হওয়ায় এর অধিকাংশ ক্রেতা শহরের। বিধিনিষেধের কঠোরতাও মূলত শহর কেন্দ্রীক। ফলে ড্রাগন চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাই বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে লিখিতভাবে জানানো হবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর