নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও বন্দরে পৃথক দু’টি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বোমা ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় মামলা করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
সোমবার সিটিটিসি’র উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মর্তুজা বাদী হয়ে আড়াইহাজার ও বন্দর থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দু’টি দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি দুই থানার ওসি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় এসআই গোলাম মর্তুজা উল্লেখ করেছেন, ঢাকার পল্লবী থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলার গ্রেফতার আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নব্য জেএমবির সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে আকিল আল বাঙ্গালী ওরফে ডেভিড কিলারকে (২১) গ্রেফতার করা হয়। আব্দুল্লাহ আল মামুনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আড়াইহাজারের নোয়াগাঁও মিয়াছাবের বাড়ির তার কক্ষে অভিযান চালানো হয়। গত ১১ জুলাই বিকেল পাঁচটার দিকে মামুনের ঘরটি ঘেরাও করে সিটিটিসি। সেখানে বিস্ফোরক রয়েছে তথ্যের ভিত্তিতে বোমা ডিস্পোজাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। রাতভর অভিযান চালিয়ে তিনটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। এ সময় হলুদ-লাল রঙের সাতটি গ্যাসক্যান, ৩০০ গ্রাম লাল রঙের বিস্ফোরক জাতীয় পাউডার, দুই প্যাকেট ছোট আকারের বেয়ারিং বল, এক সেট রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, ৫শ’ ক্রিসমাস বাল্ব (মরিচাবাতি), এক রোল সাদা কার্টন টেপ, সাত ইঞ্চি লম্বা লোহার পাইপ, একটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করে সিটিটিসি। মামলায় বলা হয়েছে, গ্রেফতার আব্দুল্লাহ আল মামুন গত ১৭ মে সিদ্ধিরগঞ্জের পুলিশ বক্সের সামনে বোমা রেখে হামলার চেষ্টা করেছিল। সে ও তার সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলার উদ্দেশ্যে এইসব বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম জড়ো করেছিল। আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বায়তুল্লাহ মেহসুদ ওরফে ক্যাপ্টেন খাত্তাব (২৩) মামুনের কক্ষে আফনান (২৪) সহ অজ্ঞাত ৫-৬ জন সদস্য নিয়মিতভাবে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতো।
এদিকে বন্দরের ধামগড় ইউনিয়নের কাজীপাড়ার একটি বাড়িতে অভিযান শেষে সিটিটিসি’র প্রধান আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, সিটিটিসির একটি টিম তিন দিন আগে বারেক ওরফে সাব্বিরসহ তিন জঙ্গিকে ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেফতার করে। বারেকের দেয়া তথ্যানুযায়ী রবিবার সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ থেকে মেজর ওসামা ওরফে নাইমকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। জিজ্ঞাসাবাদে নাইম জানায়, তিনি নব্য জেএমবির একজন সদস্য এবং পাশের একটি মসজিদের ইমাম। যে বাসা থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে তিনি সপরিবারে বসবাস করতেন। কয়েক দিন আগে তিনি পরিবারকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
তিনি বলেন, এখানে কমপ্লিট কোনো বোমা পাওয়া যায়নি। এখানে বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও ৪টি রিমোট এবং শক্তিশালী আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বোমা তৈরির সামগ্রী পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী জানান, বন্দরের ধামগড় ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেন একজন আহলে হাদিসের অনুসারী। তিনি কাজীপাড়া এলাকায় আহলে হাদিস নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই মসজিদের ইমাম ছিলেন গ্রেফতার হওয়া নাইম। দুই মাস আগে নাইম পরিবারকে দেশের বাড়ি কেরাণীগঞ্জে রেখে আসেন। এর আগে নব্য জেমএমবির সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুনকে যাত্রীবাড়ি থেকে গ্রেফতারের পর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের নোয়াগাঁও এলাকার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় সিটিটিসি। বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, সিটিটিসির এসআই গোলাম মর্তুজা সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তভার থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ মহসীনকে দেওয়া হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন