ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দেওয়া আগুনে দগ্ধ সেই গৃহবধূর মৃত্যু
নরসিংদী প্রতিনিধি
পারভিন বেগম।

প্রায় ৩৬ ঘণ্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন পারভিন বেগম (৩০) নামে এক গৃহবধূ। নরসিংদীর রায়পুরায় দেবর ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে সোমবার ভোরে মারা যান তিনি।

পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা জায়, রায়পুরার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সোবানপুর গ্রামের দানা মিয়ার মেয়ে পারভিন বেগমের সাথে মরজাল এলাকার প্রবাসী জাকির হোসেনের বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ১০ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পারভিন বেগমের স্বামী প্রবাসের থাকার কারণে প্রায় সময়ই শ্বশুরবাড়ির লোকজন পারভিন বেগম ও তার সন্তানের ওপর কারণে-অকারণে নির্যাতন করতো।

বছরখানেক আগে পারভিন বেগমের দেবর আলী হোসেন পারভিনের সন্তানের পায়ে দা দিয়ে কোপ দেয়। নাতনীর পায়ে কোপ দেওয়ার ঘটনায় পারভিনের বাবা দানা মিয়া থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছিলেন। এরপর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মামলা তুলে নিতে পারভিনের উপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। এতে রাজি না হওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে সে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি সোবানপুরে গিয়ে উঠতে বাধ্য হয়।

এরই মধ্যে শনিবার টিকা দেওয়ার নাম করে পারভিনকে বাবার বাড়ি থেকে মরজাল শ্বশুরবাড়িতে ডেকে নিয়ে আসে। বিকালে দেবর আলী হোসেন, ননদের ছেলে শাহরিয়ার, ননদ তাসলিমা বেগম ও জা রহিমা বেগমের সাথে শ্বশুরবাড়ি থেকে সিএনজিযোগে টিকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। সিনজিতে উঠে কিছুক্ষণ পর তার চোখমুখ বেঁধে ফেলে। রাতে তার দেবর কোনো নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে সিএনজি থেকে নামিয়ে তাকে শ্লীলতাহানী করে। পরে আবার সিএনজিতে উঠিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরতে থাকে। পরে রায়পুরা-বারৈচা সড়কের পাশে লোচনপুর এলাকার একটি বাঁশঝাড়ের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে একপর্যায়ে তার দেবর তরল জাতীয় কিছু শরীরে ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

পরে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। অবস্থার অবনতি হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাত ৩টার দিকে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে, এ ঘটনায় দগ্ধ পারভিনের ভাই আকরাম হোসেন বাদী হয়ে দেবরসহ চারজনকে আসামি করে রায়পুরা থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযুক্ত দেবর আলী হোসেন ও ননদের ছেলে শাহরিয়ারকে গ্রেফতার করেছে।

নিহত পারভিনের মা সুফিয়া বেগম বলেন, পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে তারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমার মেয়ে কত কষ্ট ও যন্ত্রণা পেয়ে মরেছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। আমি তাদের ফাঁসি চাই।

রায়পুরা থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। পূর্বের মামলাটি এখন এটি হত্যা মামলায় রুপান্তরিত হবে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার দুইজনকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর