ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

গঙ্গাচড়ার ৭ ইউনিয়নে ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দী
নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি এক রাতেই বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ওই পয়েন্টে বিপদসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবার পানির প্রবাহ ছিল ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। একরাতে পানি বেড়েছে ৮০ সেন্টিমিটার। শুক্রবার দুপুরের দিকে পানি কমতে থাকলেও ডালিয়া ব্যারেজের ৪৪ টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। 

কদিন আগের আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই তিস্তা পাড়ের মানুষের মাঝে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা বেষ্টিত রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নের প্রায় ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত দেড় মাস ধরে দফায় দফায় দু-তিন দিনের মধ্যে তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে পানিবন্দী ও ভাঙনে নিঃস্ব পরিবার গুলোর দুর্ভোগের শেষ নেই। তিস্তার ভাঙনে এবার চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চর। এ চরের মানচিত্র পাল্টে দিয়ে নিঃস্ব করেছে ৩শ পরিবারকে। এছাড়া বেড়িবাঁধ, পাকা রাস্তা, স্বেচ্ছাশ্রমবাঁধ, চরের চলাচলরত রাস্তা, ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় তিস্তার পানি বিনবিনা গ্রামে প্রবেশ করছে। আবাদী জমি তিস্তার গর্ভে চলে গিয়েছে। তিস্তার পানি প্রবেশের কারণে বিনবিনার বসবাসকারীরা ২০ দিনের বেশি সময় ধরে পানিবন্দী আছে। এরপরই লক্ষীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ চরের আবাদী জমিসহ প্রায় দেড়শ পরিবার নিঃস্ব হয়েছে।

বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত এবং বিকালে তা বিপদসীমার কাছাকাছি আসলেও রাতে আবারও পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদেন দেয়া তথ্যে কোলকোন্দের বিনবিনাচর, মটুকপুরচর, চিলাখালচর, খলাইরচর, সাউদপাড়া, কুড়িবিশ্বা বাঁধের ধার, উত্তর কোলকোন্দ বাঁধের ধারের ২ হাজার ৫শ, লক্ষীটারীর পশ্চিম ইচলি, মধ্য ও পুর্ব ইচলি, বাগেরহাট, কলাগাছি, কেলারপাড়ের ১ হাজার ৫শ, নোহালীর মিনার বাজার চর, নোহালীর চর, বৈরাতী বাঁধের ধার, শাংগের বাজার বাঁধের ধারের ১ হাজার, আলমবিদিতরেন হাজীপাড়া, পীরপাড়া, বৈরাতী বাঁধের ধারের ৭শ, গঙ্গাচড়ার ধামুর ও বোলার পাড়ের বাঁধের ধারের ৬শ, গজঘণ্টার ছালাপাকচর, গাউছিয়া, বাঁধের ধারসহ নিম্ন এলাকার ৭শ ও মর্নেয়ার তালপিট্টচর, মর্নেয়াচরসহ চরাঞ্চলের ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এসব পরিবার আবার রান্না করার সম্যায় খাবার সংকটে পড়েছে। আশ্রয় নিয়েছে উচু স্থানসহ অন্যের বাড়িতে।

কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু ও লক্ষীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এত মানুষের বাড়ি ও জমি-জমা, রাস্তা-ঘাট ভাঙত না এবং পানিবন্দীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতনা। তারা শুধু ভাঙনের মাঝখানে জিও ব্যাগে চেষ্টা করে। অন্যদিকে ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির তীব্র স্রোতে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে আলমবিদিতর ইউনিয়নের কুটিরপাড় চওড়া পাড়ার ৭ পরিবারের বাড়ি বিলীন হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে ঘাঘটে বিলীন পরিবারগুলোর খবর নিতে ও ভাঙন দেখতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলীমা বেগম পরিদর্শন করেছেন। 

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জাকারিয়া সকালে পানি বৃদ্ধি ও বিকেলে পানি কমার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর