ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

চলনবিলে নৌকা ভ্রমণের নামে অশ্লীলতা, বসে জুয়ার আসর
নাটোর প্রতিনিধি

চলনবিল এলাকায় নৌ-ভ্রমণের আড়ালে চলছে অশ্লীলতা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি পিকনিক ও নৌকা ভ্রমণের নামে নর্তকিদের ভাড়া করে এনে অশ্লীল কার্যকলাপে মত্ত হয়ে ওঠেন। নৌকায় চলে অশ্লীল নৃত্য, অসামাজিক কাজ, বসে জুয়া ও মাদকের আসর। এতে ক্ষুব্ধ চলনবিলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা ভ্রমণ পিপাসুরা।

সরেজমিনে চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ ভ্রমণ নৌকার সামনে অশ্লীল পোশাকে নাচছেন নর্তকীসহ হিজড়ারা। আর এদের সঙ্গে নৌকায় নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করে নাচতে দেখা যায় কিশোর-যুবকদের। নৌকার মধ্যেই বসানো হয় জুয়া ও মাদকের আসর। অথৈ পানির মধ্যে নৌকায় চেপে এসব অপকর্ম হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় বেপরোয়াভাবে চলছে এসব কার্যক্রম। এতে বিলপাড়ের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও তাড়াশ থানা এলাকা থেকে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বেড়িয়ে পড়েন নৌকা ভ্রমণে। সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার রান্না হয় নৌকাতেই। স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নর্তকি ও অখ্যাত কণ্ঠশিল্পীদের ভাড়া করে আনা হয়। এরপর উচ্চস্বরে গান-বাজনার তালে তালে নৌকার মধ্যেই চলে অশ্লীল নৃত্য। পাশাপাশি বসে জুয়া ও মাদকের আসর। এসব নর্তকি ও হিজড়াদের অন্য জায়গা থেকে টাকা দিয়ে এনে অবৈধ এমন কর্মকাণ্ড চালায় ভ্রমণে আসা যুবকরা। নর্তকি ও হিজড়া থাকা নৌকাগুলোর বেশিরভাগ অংশই ছাউনি দেওয়া। আর দিনে নাচের মাধ্যমে আনন্দ দিলেও রাতে ঘটছে অসামাজিক কার্যকলাপ। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনই ছোট-বড় অসংখ্য নৌকা চলে নদীতে। কিন্তু নৌকা ভ্রমণের নামে নদীতে বাজানো হয় অতিরিক্ত শব্দে গান-বাজনা। 

হিন্দি ও ডিজে গানের তালে তালে চলে অশ্লীল নৃত্য। ফলে নৌকা ভ্রমণের নামে অপসংস্কৃতির চর্চা, শব্দদূষণ ও মাদকের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। 

পরিবেশকর্মী ও শিক্ষক সোহেল আহমেদ জীবন জানান, দিনে নৃত্যের মাধ্যমে আনন্দ দিলেও রাতে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় অনেকেই। যেকোনো সময় যৌন নিপীড়ন, নৌকাডুবি, হানাহানিসহ নানান অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।

চলনবিলের গবেষক ও কবি সৌরভ সোহরাব বলেন, নৌকাভ্রমণের নামে চলে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। দিনরাত মাত্রাতিরিক্ত শব্দে গান-বাজনা বাজিয়ে চলে নৌকা। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নর্তকি ও হিজড়ারা নৃত্য করে। অপসংস্কৃতি রোধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

সিংড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. এমরান আলী রানা বলেন, চলনবিলে নৌকা ভ্রমণের নামে চলা অশ্লীলতায় ডুবছে যুব সমাজ। ফলে অভিভাবকরা উঠতি বয়সের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ও নৈতিক অবক্ষয় নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন।

সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূর-এ-আলম সিদ্দিকী জানান, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণাত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম এম সামিরুল ইসলাম বলেন, চলনবিলে অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর